বাণিজ্যযুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের সতর্কতা

শেয়ার বিজ ডেস্ক : বাণিজ্যযুদ্ধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে চীন। দেশটি বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) নীতি উপেক্ষা করলে এবং একতরফাভাবে পণ্যে শুল্ক বসালে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। খবর রযটার্স।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সান জেভি বলেন, কেউ যদি নিজের স্বার্থে ডবিøউটিও’র নীতি লঙ্ঘন করে, বাণিজ্য বিতর্কে সংস্থাটির নীতি প্রত্যাহার করে, তাহলে বহুপাক্ষিক যে বাণিজ্য মেকানিজম আছে তা অর্থহীন হয়ে পড়বে এবং ১৯৩০ সালের মতো বাণিজ্যযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি হবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন তাদের বার্ষিক বাণিজ্যনীতি এজেন্ডায় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তোয়াক্কা করে না; সংস্থাটির নীতি মানতেও বাধ্য নয় তারা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতিকে উপেক্ষা করার ওই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় সান জেভি এ সতর্ক বার্তা দিলেন।

বার্ষিক বাণিজ্যনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি তাদের বাণিজ্য আইনকে আরও কঠোর করবে। সেখানে আরও বলা হয়, যদি ক্রমবর্ধমান আমদানি দেশীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে ওয়াশিংটন চুপ করে বসে থাকবে না। প্রশাসন একতরফাভাবে হলেও আমদানির ওপর শুল্ক বসাবে। যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্যনীতির সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক এবং তা রক্ষায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেসে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, চীন ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় আসার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কারখানা লোকসানের মুখে পড়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে।

নথিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বহুজাতিক সম্পর্কের চাইতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কই ভালো। তাই তারা দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চায়।

এদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান রবার্তো অ্যাজেভেদো যুক্তরাষ্ট্রের এ মনোভাবের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র তার ইচ্ছেমতোই বাণিজ্যনীতি করতে পারে। তাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘিত হলেও কিছু যায় আসে না। তবে বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা দেশটি  যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আছেন অ্যাজেভেদো।

ওই সময় চীন জানিয়েছিল, ১৬৪ জাতির এই সংগঠনের সব দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় তারা। সংগঠনের প্রয়োজনে সব ধরনের সহায়তাও করবে তারা।

এর আগে নির্বাচনী ইশতেহার ও একাধিক বিবৃতিতে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে কঠোর বাণিজ্যনীতির ঘোষণা দেন। রফতানি থেকে বেইজিং অযৌক্তিকভাবে সুযোগ আদায় করছে বলে অভিযোগ করে তিনি চীনের পণ্যে ৪৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ঝং স্যান গত সপ্তাহে বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধু দুই দেশের ওপরই প্রভাব বিস্তার করে না, তা পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে ও তাদের পশ্চিমা বন্ধুরা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চীন নির্ভরশীল। আমি মনে করি, তাদের কথা আংশিক ঠিক। তবে তারাও চীনের ওপর নির্ভরশীল।

এক সমীক্ষা অনুযায়ী, গত বছর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ছিল ৫১ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার, যা সত্তর দশকের তুলনায় দুইশ গুণ। ওই সময়ই দুই দেশের মধ্যে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে, তা কার্যকর হলে দুই দেশের মধ্যে এ বাণিজ্য সম্পর্ক অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

উল্লেখ্য, বহু দেশভিত্তিক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনে মধ্যে গত ২৩ জানুয়ারি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের নির্বাহী আদেশে সই করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০