শেয়ার বিজ ডেস্ক: চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শুল্কারোপের পন্থা ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে। তার পাল্টা জবাব দিয়েছে বেইজিং। তবে চীনের কাছে আরও চারটি অস্ত্র রয়েছে, যা পরিস্থিতির শিকার হলে ব্যবহার করতে পারে দেশটি। বিবিসির এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে পারে চীন। এজন্য কাস্টমস ব্যবস্থা কঠোর করা, নতুন আইন বা বিধিনিষেধ জারি করা এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। সিরাকুজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যারি লভলি বলেছেন, এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ইতিহাস রয়েছে চীনের, যা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য উদ্বেগের। তবে এতে উভয় পক্ষকে মূল্য দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রকে একঘরে করে তোলার প্রচেষ্টা চালাতে পারে চীন। সম্প্রতি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিয়ম পাল্টানোর ফলে ফলাফল পাওয়ার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অনেক সময় পাবেন। এতে চীন আস্তে আস্তে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বা জোট গড়ে যুক্তরাষ্ট্রকে একঘরে করে ফেলতে পারবে। ইউরোপ, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে বেইজিং এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে কানাডা, মেক্সিকো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরিস্থিতি চীনকে নতুন বন্ধু পেতে সহায়তা করবে।
তৃতীয়ত, চীন সরাসরি বাণিজ্যিক আক্রমণ করতে চাইলে সহজ সমাধান হলো ইউয়ানের মান কমিয়ে দেওয়া। এর ফলে চীনের রফতানি পণ্যের দাম কমবে এবং রফতানিকারকদের সুবিধা হবে। একই সঙ্গে তা আমেরিকান পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে। অর্থনীতিবিষয়ক লেখক ব্রায়ান বোর্জিকোয়স্কি বলেছেন, এটি চীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য অস্থিরতাও তৈরি করতে পারে।
চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক দশমিক ১৭ ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ট্রেজারি বন্ড রয়েছে চীনের কাছে। অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, পরিস্থিতির অবনতি হলে চীন এসব বন্ড ছেড়ে দিতে পারে। এগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিলে তা আন্তর্জাতিক বাজারে বড় প্রভাব ফেলবে। বেশি বন্ড বাজারে চলে এলে তার দাম পড়ে যাবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য অর্থ সংগ্রহ কঠিন হবে। এতে দেশটির অর্থনীতির গতি কমে যাবে।
এসব অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে বিশ্লেষকদের বড় অংশ মনে করেন, শুল্ক আরোপের বাইরে চীন বাণিজ্যযুদ্ধ আর বাড়াতে চাইবে না। চীনের অর্থনীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ স্কট কেনেডি বলছেন, বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীন অনেক বেশি ভঙ্গুর অবস্থায় পড়বে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেক বড় ও বেশি দক্ষ।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন তাদের ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ড কঠিন করে তুললে তা হবে বিরল ঘটনা। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিংলিৎজ মনে করেন, বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষেত্রে চীন তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানেই রয়েছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো চীনের তিন ট্রিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। তবে এ যুদ্ধ সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক বাজারকে অস্থির করে তুলতে পারে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:17 am
বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের অব্যবহৃত চার কৌশলগত অস্ত্র
আন্তর্জাতিক ♦ প্রকাশ: