বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষে সফল যশোরের মুনসুর

প্রতিনিধি, যশোর : ইউটিউব থেকে দেখে শিখে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টিজাতের ভারতীয় আঙুর চাষে সফল হয়েছেন যশোরের মুনসুর আলী। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন মুনসুর আলীর আঙুর ক্ষেত দেখতে। মুনসুর আলীর সাফল্য দেখে অনেকেই উৎসাহীও হচ্ছেন আঙুরের বাগান করতে।

যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা সবজি চাষি মুনসুর আলী দুই বছর আগেও সবজি চাষ করতেন। একদিন ইউটিউবে দেখেন, ভারতের মাটিতে আঙুরের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতে বসবাসকারী এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসের দিকে চয়ন জাতের ১২০টি আঙুর গাছের চারা সংগ্রহ করে ৩৩ শতক জমিতে রোপণ করেন মুনসুর আলী। সাত মাসের মাথায় ভালো ফলন আসে। ১৮ মাস পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো গাছে বাম্পার ফলন এসেছে। এখন তার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙুরের ছড়া। ফলনের পরিমাণ এত বেশি হয়েছে যে গাছের প্রতি দুই তিনটি পাতা পরপরই শোভা পাচ্ছে আঙুরের থোকা।

প্রথমবার প্রতি গাছে ১০-১৫ কেজি ফল পেয়েছিলেন মুনসুর আলী। চারা রোপণের সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আঙুর যদি মিষ্টি হয় তাহলে প্রথমবার গাছের সব ফল বিনামূল্যে মানুষকে খাইয়ে দেবেন। সে অনুযায়ী সব ফল খাইয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে মুনসুরের বাগানের মিষ্টি আঙুরের ভালো ফলন ও আঙুর মিষ্টি হওয়ার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন বাগান দেখতে এবং চারা কিনতে আসছেন।

মুনসুরের বাগানে শুক্রবার কথা হয় ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার উজানদিয়া গ্রামের ফল চাষি মুন্সী আতাউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে গ্রামের তিন একর জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করেছি। সেখানে প্রায় চার হাজার খুঁটি আছে। প্রতি খুঁটিতে একটি করে গাছ থাকে। মুনসুরের বাগানের কথা শুনে দেখতে এসেছি। ফল দেখে অবাক হয়েছি। থোকায় থোকায় এত আঙুর। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী বছর এক একর জমিতে আঙুর চাষ করব। মুনসুর ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, টেকনিক্যাল দিকগুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার কাছ থেকে চারা নিয়ে বাগান করব।’

মুনসুর আলী জানান, ‘দুই বছর আগে নিজের ৩৩ শতক জমিতে আলু, পটোল ও উচ্ছে চাষ করেছিলেন। এতে লোকসান হয়েছিল। এরপর ইউটিউবে দেখেন, ভারতে ফলেছে প্রচুর আঙুর। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে চাষের পদ্ধতি শিখে ভারত থেকে চারা এনে সবজির জমিতে লাগিয়ে দিলেন। চারা রোপণের সাত মাসে ফলন আসে উল্লেখ করে মুনসুর বলেন, ‘বাগানের সব ফল মিষ্টি। ১৮ মাস পর দ্বিতীয়বার ফল এসেছে। প্রতি গাছে দেড়-দুই মণ ফল পাব আশা রেখে এই মুনসুর বলেন, ‘আগামী এক মাস পর ফল খাওয়ার উপযোগী হবে। এটি লাভজনক চাষাবাদ। ভালোই আয় হবে। বসতবাড়ির পাশে যদি প্রত্যেকে চার-পাঁচটি করে গাছ লাগাই, তবে আঙুর আমদানি করা লাগবে না। একটি গাছ ৩৫ বছর বাঁচে। ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে।’

জমি তৈরি ও গাছ লাগানোর পদ্ধতি সম্পর্কে মুনসুর আলী বলেন, ‘৮ ফুট পর পর একটি করে গাছ লাগিয়েছি। গাছ লাগানোর আগে জমি প্রস্তুত করে ইটের গুঁড়া, সিলেট বালি অর্থাৎ মোটা বালি ও জৈব সারের মিশ্রণ করে দিয়েছি। প্রতিটি উপাদান পাঁচ কেজি করে ১৫ কেজি একটি গর্তের ভেতরে ফেলে মাঝখানে চারা রোপণ করেছি। গাছের গোড়া মাটি দিয়ে উঁচু করেছি; যাতে পানি না জমে। এছাড়া লতার জন্য মাচা তৈরি করে দিয়েছি; যাতে ঝড়বৃষ্টিতে গাছ ভেঙে না পড়ে এবং দ্রুত লম্বা হয়। সবমিলিয়ে বাগান করতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’

শুক্রবার মুনসুরের বাগান দেখতে আসা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘বাগান দেখে মুগ্ধ হয়েছি। যশোরে অনেক উদ্ভাবনী কৃষক আছেন। এজন্য যশোর ফল-ফুল ও সবজি চাষের জন্য সমৃদ্ধ।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০