জাহিদ হাসান: যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে আসে অনেক বাধা-বিপত্তি। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজন
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি সবজি চাষ হচ্ছে। এই সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মেইটকা গ্রামের অনেক চাষি। এখানকার উৎপাদিত সবজির চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের চাইনিজ রেস্তোরাঁয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রির আড়তে সাভারের এই বিদেশি সবজির রয়েছে বেশ চাহিদা।
বিদেশি সবজি চাষে সাভারের দক্ষিণ মেইটকা গ্রামের সফল উদ্যোক্তা মো. কাইয়ুম হোসেন। তার কৃষি খামারটির নাম ‘কৃষক বাংলা এগ্রো প্রোডাক্ট’। কাইয়ুম হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই সবজি চাষ করে আসছেন। বাবা আবদুল কাদেরের আগ্রহে প্রথমে ১০ শতাংশ জমিতে ‘বেবি কর্ন’ দিয়ে এই বিদেশি সবজি চাষ শুরু করেন। মূলত তিন ভাই মিলে এই কাজটি করছেন। সবজি উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা ও সবজি তুলে সেটি বাজারজাতকরণের জন্য প্যাকেটজাত বা তৈরি করা তার কাজ। উৎপাদিত সবজি দিয়ে তার বড় ভাই মোশারফ হোসেন সাভারের থানা রোড ও হেমায়েতপুরে দুটি চাইনিজ রেস্তোরাঁ চালান। আর ছোট ভাই কোব্বাদ হোসেন উৎপাদিত সবজি কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তসহ ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন চাইনিজ রেস্তোরাঁয় সরবরাহের কাজটি দেখাশোনা করেন। তিন ভাই মিলে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা সবজির বীজ সংগ্রহ ও চাষের কৌশল রপ্ত করেছেন।
কাইয়ুম হোসেন বলেন, প্রায় দেড়শ বিঘা জমিতে এখন বিভিন্ন ধরনের বিদেশি সবজি চাষ করছেন। এর মধ্যে ১০ বিঘা বাদে বাকি জমি লিজ নিয়ে চাষ করেন। তার উৎপাদিত সবজির মধ্যে রয়েছে স্প্রিং অনিয়ন, সুইট কর্ন, সিমলা মরিচ, জালাপিনু মরিচ, থাই পাতা, থাই আদা, থাই পালং শাক, জুকিনি, পাচলি, লাল কপি, প্রসেস্ড ও নন-প্রসেস্ড বেবিকর্ন, ব্রকলি, বিট রুট, ডালের গেরা, বেন কার্ড তপু, বকচাই, লাল বাঁধাকপি, চাইনিজ পাতা, সেলরি, নানা রঙের ক্যাপসিকাম, গাজর, চেরি টমেটো, ফ্রান্স বিন, আইসবার্গ, ওয়েস্টার মাশরুম প্রভৃতি।
এলাকার আল-আমিন, রমজান তালুকদার, আসাদুল ইসলাম, শাহজালাল মিয়া, সাদেক মোল্লা, মিলন কুমার, সোহরাব হোসেনসহ আরও অনেকেই তার দেখাদেখি বিদেশি সবজি চাষে এগিয়ে এসেছেন। কাইয়ুম বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় বিদেশি এই সবজি চাষে লাভ বেশি। এ কারণে অনেকেই এখন এই সবজি চাষে আগ্রহী। তাছাড়া এসব সবজি এখন সাধারণ মানুষেরাও চিনতে শুরু করেছেন। তাই চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন।
সবজির সাধারণ রোগবালাই হলে তিনি সামান্য কীটনাশক ব্যবহার করে সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে গোবর বা জৈবসারই বেশি ব্যবহার করেন। যতœ নিলে সারা বছর ফলন পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। ভবিষ্যতে বিদেশেও এই সবজি রফতানির আশাবাদ আছে তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। সবজি চাষিদের সমস্যা সমাধানে তারা ভীষণ আন্তরিক। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিদুল ইসলাম জানান, মাটি উর্বর ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় সাভারে বিদেশি সবজি চাষ বাড়ছে। কাইয়ুমের মতো অনেকেই বিদেশি সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাদের মাঠপর্যায়ে সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এখানে প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে।
সাভার