বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার হিড়িক

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও পরিচালনায় ছিল আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন ও সমর্থকরা। এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে কেউ ২৫ বছর, কেউ ১৬ বছর, কেউ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে ছিলেন। এখন সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে একে একে এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে শুরু করেছেন। এ পরিবর্তনের ধারায় আরও ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং পরিচালক পদ ছাড়ার অপেক্ষায়।

ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকার-ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে শুরু করেছেন। কোনোটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে পদ ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ হস্তক্ষেপের আগেই কেউ কেউ রাজনৈতিক রোষানলের ভয়ে সরে যাচ্ছেন দায়িত্ব থেকে। এরই মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং ইউসিবি’র চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়ে গেছে। সর্বশেষ গত বুধবার বেসরকারি খাতের শরিয়াহভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করেন। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। আগামী এক বছরের জন্য তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে ইউসিবি চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামান। তার পরিবর্তে আসেছেন জাবেদের বোন রোকসানা জামান চৌধুরী।

ন্যাশনাল ব্যাংককের পরিচালনা ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠিত পর্ষদের দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যাংকটির পুরোনো উদ্যোক্তা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের চেয়াম্যান পদ থেকে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম লাবু পদ ছেড়ে দিয়ে কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানকে চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়। অপরদিকে পদত্যাগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী। এছাড়া আইএফআইসি, ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএলসহ আরও ডজন খানিক ব্যাংকে একই ধরনের পরিবর্তনের আলোচনা চলছে।
সর্বশেষ সংশোধিত আইন অনুযায়ী, একজন চেয়ারম্যান টানা তিন শেয়াদে সর্বোচ্চ ৯ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এ আইন লংঘন করে ১৯৯৯ সালের ১১ মে যাত্রা শুরু করা ব্যাংকটিতে একটানা ২৫ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন কাজী আকরাম।

তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি। এভাবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ডা. এইচ বি এম ইকবাল, এক্সিম ব্যাংকে নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ব্যাংক, আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ও বিমার চেয়ারম্যান পদে আছেন। এসব ব্যাংক চেয়ারম্যানরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থে এ বিধান চালু করেন। ফলে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সরকার-ঘনিষ্ঠরা। ব্যাংক চেয়ারম্যানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে তিনবার ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়।

২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে প্রায় ১৫টি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়। যার সবগুলোই রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া হয়। এ ছাড়া তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রায় সব ব্যাংকই আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। যেসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পদধারী নেতা ও সাবেক এমপিরা রয়েছেন, তারা পটপরিবর্তনের পর পদ ছাড়ছেন। একইভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ বিমা ও জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানের আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা
চেয়ারম্যান পদে পদধারী নেতা ও সাবেক এমপিরা রয়েছেন, তারা পটপরিবর্তনের পর পদ ছাড়ছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সরকার কোনো ব্যাংকের দায়িত্ব নেবে না। আপাতত স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে ব্যাংকগুলো চলবে। এস আলম গ্রুপ ছাড়া অন্যদের হাতে ২ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকলে পরে তারা পর্ষদে আসতে পারবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০