Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 9:52 pm

বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ২৯ হাজার কোটি টাকা

রোহান রাজিব: চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২৮ হাজার ৯৫২ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে আগস্ট মাসেই নিয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। জুলাইতে যার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। তবে একই সময় সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে দুই মাসে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। মূলত ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক মুনাফা করেছে; যে অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে। এতে সরকারের ঋণ চাহিদা কিছুটা কমেছে; তা না হলে সরকারের ঋণ চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেত। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণত জুলাইয়ে সরকার বেশি ঋণ করে থাকে। তবে এবার জুলাই মাসে তুলনামূলক কম ঋণ নেয়া হয়েছে মূলত কোটা সংস্কার ইস্যুতে আন্দোলনের কারণে ওই মাসে ব্যাংক কিছুদিন বন্ধ রাখ হয়। ফলে সরকারের ঋণ নেয়ার নিয়মিত অকশন হয়নি। আর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেন। এ সময় বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে নতুন সরকারের ঋণের প্রয়োজন হয়। এতে ঋণ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা; যা চলতি বছরের আগস্ট শেষে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা।

তবে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ বেশি নেয়ায় বেসরকারি খাতে প্রভাব পড়বে। এতে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো নয় বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়ায় তারল্যে এক ধরনের চাপ তৈরি করছে, তাতে কল মানির রেটও ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠছে।

রপ্তানি কম হওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা কম ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাই এই প্রভাবটা (সরকারের ঋণ গ্রহণ) সেভাবে বোঝা যায়নি। ব্যাংকগুলো নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ হিসাবে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বেছে নিচ্ছে। কারণ সরকার টাকা নিলে সেই টাকা নিরাপদ ও সুদের হারও বেশি। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার আগে বেশি ছিল না। কিন্তু গত দেড়-দুই বছরের মধ্যে সুদের হার সর্বোচ্চ হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঢুকেছে। এসবের প্রভাবে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে। তবে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।

গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। আগস্ট শেষে স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। দুই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ১৮ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় যা ছিল ২৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের আগস্ট শেষে সরকারের ব্যাংক খাতে নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৯২ কোটি টাকা; যা গত জুনে ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সরকারের ব্যাংক খাতে নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ৫ হাজার ১৭০ কোটি টাকা নিট ঋণ ঋণাত্মক ছিল।
চলতি অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে এবার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত অর্থবছর ১৮ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকা করা হয়। যদিও গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্রে
সরকারের ঋণ উল্টো কমেছে ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।