বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবন গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিটি অগ্নিদুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সবারই এক কথাÑনগরের বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এমন দুর্ঘটনা। মানুষের সুরক্ষার কথা চিন্তা না করে শহরে গড়ে উঠছে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা। গ্রিন কোজি কটেজের আশপাশে একই ধরনের বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন রয়েছে। কিছু ভবনের প্রথম চারতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহƒত হয়। সেখানে ভাড়া দেয়া হয়েছে রেস্তোরাঁ, কফিশপ কিংবা শপিংমল।
গতকাল একটি সহযোগী দৈনিক রেস্তোরাঁকর্মীদের বক্তব্য দিয়ে প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে, ‘টাইম বোমায় ভাসছে ঢাকা’। একই পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার দুটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘ধানমন্ডির পাঁচ ভবনে ৯২ রেস্তোরাঁ’ এবং ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের মামলা: রাজউক পরির্দশককে ম্যানেজ করেই চলছে সব’। গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ছবির ক্যাপশন ‘রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় রেস্টুরেন্টগুলো বাস্তবে যেন একেকটা মৃত্যুপুরী’। এসব রেস্টুরেন্টে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে গতকাল ওই এলাকায় মানববন্ধন করেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
বেইলি রোড, ধানমণ্ডি, খিলগাঁওই নয়, পুরো ঢাকা শহরের একই অবস্থা। যিনি যে এলাকায় থাকেন, তিনিই জানেন কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই।শুধু রেস্তোরাঁ আর রেস্তোরাঁ! প্রতিবারই অগ্নিকাণ্ডের পর জানমালের ব্যাপক ক্ষতির পর জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিকে কদিন আগেই চতুর্থবারের মতো নোটিশ দেয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জনৈক কর্মকর্তা পত্রিকান্তরে বলেছেন, সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই আমরা নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু আমরা তো জোর করে তাদের উচ্ছেদ করতে পারছি না।
এতগুলো মন্দ খবরের পর একটি ভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকাল। ধানমণ্ডির ১৫/এ-তে একটি বহুতল একটি ভবনে রয়েছে, স্থপতি মুস্তাফা খালিদ। তিনি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে অনুরোধ করেছেন, কেউ যেন ওই ভবনে না যান। কারণ হিসেবে বলেছেন, ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। নকশা ও অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে একে সমূহ অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে।
ঢাকার সর্বত্রই এভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আবাসিক-বাণিজ্যিক সংমিশ্রণের ভবনগুলো। ফায়ার সার্ভিসের এক সমীক্ষামতে, রাজধানীর ৯০ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৩ শতাংশ ভবন। বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যানার টানাতেও দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিসকে। তাতেও টনক নড়েনি কারও। মালিকরাও গুরুত্ব দিচ্ছেন না ফায়ার সার্ভিসের দেয়া সতর্কবার্তাকে।
রাজউকসহ ছয়টি সংস্থা রাজধানীর ভবনের বিভিন্ন অনুমোদন দেয়। কিন্তু এই অনুমোদন অনুযায়ী ভবনগুলো যথাযথ হচ্ছে কি না, ব্যবহার হচ্ছে কি না, এগুলো তদারকি করা হচ্ছে না। ‘রানা প্লাজা ধসের মতো ঘটনা মাত্র দেড় বছরে পুরো পোশাকশিল্প খাতকে কমপ্লায়েন্সে পরিবর্তন করে ফেলেছে। অথচ এত অগ্নিদুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষতি সত্ত্বেও ইমারত বিধি মেনে, ভবন নির্মাণবিধি মেনে ভবন নির্মাণ এবং বিধি পরিপালন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক অঙ্গীকারের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।