বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পারমাণবিক চুল্লি উৎপাদন করবে মিতশুবিশি

Mitsubishi Heavy Industries Ltd. unveils the first stage of an H-2B rocket, which will be launched from the Tanegashima Space Center in Kagoshima Prefecture, to the media at its factory in the village of Tobishima, Aichi Prefecture, on July 26, 2016. The rocket will carry the Konotori 6 cargo transporter to take supplies to the International Space Station. (Photo by Kyodo News Stills via Getty Images)

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মিতশুবিশি ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পারমাণবিক চুল্লি উৎপাদন শুরু করবে। খবর: নিক্কেই এশিয়া।

২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা দাইচি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের বিপর্যয়ের ক্ষত এখনও শুকিয়ে যায়নি। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নিলেও পরে পারমাণবিক শক্তিনির্ভর জ্বালানি উৎপাদন থেকে সরে আসে জাপান। তবে বর্তমানে দেশটি ভবিষ্যৎ জ্বালানি চাহিদা মেটাতে নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মিতশুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর বা পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের সংকল্প করেছে। তাদের এই চুল্লিগুলো আকারে এতটাই ছোট হবে যে সহজে তা ট্রাকে পরিবহন করা যাবে। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ধরনের ক্ষুদ্র চুল্লিগুলো লম্বায় তিন মিটার এবং চওড়ায় চার মিটার। এর ওজন ৪০ টনের কম। চুল্লি ও জ্বালানির অন্য উপকরণগুলো ট্রাকে বহন করা যাবে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা দুর্ঘটনা-কবলিত এলাকায় সহজে নেয়া যাবে। এই চুল্লিগুলো থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ কিলোওয়াট বা প্রচলিত চুল্লির ২০ ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। প্রচলিত চুল্লি এক গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ক্ষুদ্র চুল্লিতে ১০০ কোটি ডলার প্রয়োজন পড়ে, যেখানে প্রচলিত চুল্লি তৈরিতে খরচ হয় ৬০০ কোটি ডলার বা তার বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্ষুদ্র চুল্লির খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে প্রচলিত চুল্লির তুলনায় কম খরচ হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় ক্ষুদ্র চুল্লি চালু করা হলে খরচ কমে আসবে এবং কার্বনমুক্ত জ্বালানি পাবে স্থানীয় বাসিন্দারা।

জাপান ও অন্য দেশ থেকে ছাড়পত্র পেলে মিতশুবিশি ২০৩০ সালের আগে বাণিজ্যিকভাবে এ ধরনের প্রযুক্তি বিপণন শুরু করবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসানোর ফলে প্রচলিত চুল্লির তুলনায় ক্ষুদ্র চুল্লিগুলোকে তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ হতে হবে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটি চুল্লির সব অংশ ক্যাপসুল কনটেইনারে সিলগালা করে রাখবে। উপরন্তু জ্বালানি হিসেবে উন্নত মানের ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হবে এবং চুল্লিগুলোর আয়ুষ্কাল ২৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর পরিবর্তন করতে হবে। জ্বালানি শেষ হয়ে গেলেও আবার চালু করা যাবে এ ধরনের চুল্লি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সন্ত্রাসী হামলা থেকে সুরক্ষিত রাখতে চুল্লিগুলো মাটির নিচে স্থাপন করা যাবে এবং রক্ষণাবেক্ষণও তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। তাছাড়া চুল্লির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য মিতশুবিশি কঠিন গ্রাফাইট ব্যবহার করবে।

এ ধরনের ক্ষুদ্রাকৃতির পারমাণবিক চুল্লিকে গেম চেঞ্জার হিসেবে দেখা হচ্ছে। খরচ কমানোর পাশাপাশি নির্মাণে তুলনামূলকভাবে কম সময় নেয় এ ধরনের চুল্লি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ ধরনের প্রযুক্তির উৎপাদন শুরু না হলেও উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ এর নানা নকশার লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অকলো লাইসেন্স পেতে আবেদন করে ২০২০ সালের মার্চে। লাইসেন্স পেলে আগামী ২০২৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি আইডাহো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে প্রথম চুল্লি নিয়ে কাজ শুরু করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিংহাউস (শূন্য দশমিক দুই থেকে পাঁচ মেগাওয়াট), নুস্কেল (এক থেকে ১০ মেগাওয়াট) ও আল্ট্রাসেফ নিউক্লিয়ার (পাঁচ মেগাওয়াট), সুইডেনের লিডকোল্ড (তিন থেকে ১০ মেগাওয়াট) ও যুক্তরাজ্যের ইউরেঙ্কোও (চার মেগাওয়াট) এ ধরনের চুল্লি নির্মাণ করছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ সম্প্রতি ক্ষুদ্রাকৃতির পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন উদ্যোগের আওতায় আইডাহো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে তিন বছরের পরীক্ষামূলক এক থেকে পাঁচ মেগাওয়াট চুল্লি নির্মাণ করবে প্রতিরক্ষা বিভাগ। বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা বিভাগ জানায়, এটিই যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ প্রজন্মের প্রথম পারমাণবিক চুল্লি। তবে সমালোচকদের ধারণা, শিপমেন্টের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুরা এতে হামলা চালাতে পারে। তবে সমস্যা যা-ই থাকুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা কিংবা জাপানের মতো বৃহৎ অর্থনীতির প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাশাপাশি গরিব দেশগুলোয়ও ক্ষুদ্র চুল্লির বাজার সম্প্রসারিত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০