শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড-১৯ মহামারির কারণে দুইবার পিছিয়ে দেয়ার পর কমনওয়েলথ হেডস অব গভর্নমেন্ট মিটিং (সিএইচওজিএম) আগামী ২০ থেকে ২৬ জুন রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন ও বাণিজ্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই বলা হচ্ছে, রানির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাই কি শুধু সার হবে আফ্রিকার দেশগুলোর, না কি শিকে ছিড়বে এ দেশগুলোর? খবর: আফ্রিকান বিজনেস।
কমনওয়েলথের দ্বিবার্ষিক সভায় ৫৪ দেশের নেতারা অংশ নেন। ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়া রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে গড়া হয় এই সংগঠন। তবে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বের বা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে সংগঠনটিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ব্রিটেনের রানিকে এর আজীবন প্রধান করায় সংগঠনটি কাগজে-কলমে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও প্রয়োজনের বেলায় চিরকাল চুপ থেকেছে। যদিও দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্যের পরিসর বাড়ানো সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই এর সদস্য আফ্রিকার ১৯টি সদস্য প্রতিবার দ্বিবার্ষিক সভার আগে আশায় বুক বাঁধে যে, তাদের ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে।
চলতি বছর সভার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, Delivering a Common Future: Connecting, Innovating, Transforming । সভায় ব্যবসায়িক নেতার কয়েকটি বিশেষ ফোরামে অংশ নেবেন। থাকছে যুবক, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিশেষ ফোরাম। এবারের সভায় সংগঠনের মহাসচিব নির্বাচিত করা হবে। এ পদে দায়িত্বরত ডমিনিকান বংশোদ্ভ‚ত ব্রিটিশ ক‚টনৈতিক, ব্যারিস্টার ও রাজনৈতিক নেতা প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড আবার নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে সংগঠন আধুনিকায়নে তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না যুক্তরাজ্য। তাই তার প্রতিপক্ষ জ্যামাইকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামিনা জনসন স্মিথকে সমর্থন করেছে যুক্তরাজ্য।
২০২২ সালের সভা শেষে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য সভাপতির পদ বুঝিয়ে দেবেন। ঐতিহাসিক সম্পর্ক না থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বেড়েছে যুক্তরাজ্যের। বিশেষ করে মোজাম্বিক ও রুয়ান্ডা যথাক্রমে ১৯৯৫ ও ২০০৯ সালে কমনওয়েলথে যোগ দেয়ার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলোর সম্পর্ক গাঢ় হয়। গত এপ্রিলে টোগোর সরকার ঘোষণা দেয়, রুয়ান্ডার সভায় দেশটি কমনওয়েলথে যোগ দেবে। ফ্রাংকোফোনি (ফরাসি ভাষা ব্যবহারকারী দেশ) দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে টোগো। ফরাসি ভাষার প্রচলন রয়েছে আফ্রিকার ২৮টি দেশেও। এসব দেশের কাছে কমনওয়েলথ বিশেষ তাৎপর্যের, কেননা ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর অন্যতম মঞ্চ এই সংগঠন। তাদের কণ্ঠস্বর বিশ্ব পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার প্লাটফর্ম এটি।
ইনস্টিটিউট অব কমনওয়েলথ স্টাডিজের পরিচালক ফিলিক মারফি বলেন, আফ্রিকার অনেক দেশ বাণিজ্য ও ক‚টনৈতিক কারণে কমনওয়েলথের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। তাদের আগ্রহ অতীতের তুলনায় বেড়েছে। ক‚টনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষুদ্র দেশগুলোর কাছে এ সংগঠনের মাধ্যমে বিশ্বদরবারে হাজির হওয়ার সুযোগ ঘটে। সংগঠনের দাবি, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পণ্য রপ্তানি অন্য দেশগুলোর তুলনায় ১৯ শতাংশ কম। তবে এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি। মারফি বলেন, যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা থেকে দেশগুলো সহজে সহায়তা পায়, তবে বাণিজ্যিক সুবিধার বিষয়টি বেশ জটিল ও উল্লেখজনক নয়।
আসছে সভায় আফ্রিকার নেতারা উন্নয়ন নিয়ে নানা কর্মসূচি ঘোষণার আশা করছেন এবং একই সঙ্গে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে আশাবাদী তারা। তবে আয়োজক দেশ রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। একই অবস্থা আফ্রিকার কয়েকটি দেশের। তাদের জন্য এমন আন্তর্জাতিক সভার আয়োজন করা বেশ জটিল। এ কারণে তাদের কাক্সিক্ষত ফল পাওয়ার আশাও কম।