নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমলেও লেনদেন ভারসাম্যের বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) ঘাটতি বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৮২ কোটি ডলারে, আগের অর্থবছরের একই সময় যা দুই হাজার ২৪৩ কোটি ডলার ছিল। আট মাসে লেনদেন ভারসাম্য বা বিওপির ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯৪ কোটি ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ ঘাটতি ২২২ কোটি ডলার। তবে বিওপির ঘাটতি বাড়লেও বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাবের ভারসাম্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানির নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমলেও আগের এলসি নিষ্পত্তি বাড়ছে। রপ্তানিতে প্রায় ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে এসেছে। এ কারণে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বড় হচ্ছে। গত অর্থবছরের রেকর্ড আমদানির দায় পরিশোধের চাপে বৈদেশিক বাণিজ্যের রিজার্ভও ধারাবাহিকভাবে কমছে।
দেশের আমদানি নিয়ন্ত্রণে আনতে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে কঠোর নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিলাস পণ্যের এলসি মার্জিনের হার শতভাগে উন্নীত করা হয়। এর বাইরেও এলসি খোলায় জুড়ে দেয়া হয় নানা শর্ত। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোও এলসি খোলা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ফলে জুলাই থেকে নতুন এলসি খোলার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৮৭৯ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের এ আট মাসে পাঁচ হাজার ৪৩৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। এছাড়া আমদানির বিপরীতে এ সময় রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৪৯৬ কোটি ডলারের পণ্য, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময় তিন হাজার ১৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি শেষে সেবা খাতে দেশ আয় করেছে ৫৮৩ কোটি ডলার। অপরদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় ৮৩৯ কোটি ডলার। এতে সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৫ কোটি ডলারে। আগের অর্থবছরের একই সময় এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এছাড়া সামগ্রিক লেনদেনেও বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।
তবে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বেড়েছে। আলোচ্য আট মাসে এফডিআই এসেছে ৩৫০ কোটি ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৩১৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছিল।