শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর বাণিজ্য বিবাদ জোরালো হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ব পুঁজিবাজারে। গতকাল সোমবার ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। খবর রয়টার্স।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চীনের বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ করতে এবং চীনে অতিরিক্ত প্রযুক্তি পণ্য রফতানি বন্ধের পরিকল্পনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর এশিয়ার শেয়ার বাজারের প্রধান সূচকগুলোর বড় দরপতন হয়েছে। এছাড়া লেনদেনের শুরুর দিকে ইউরোপের সূচকগুলোও ছিল নি¤œমুখী ধারায়। এর মধ্যে জাপানের নিক্কেই সূচক কমেছে দশমিক ৭৯ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক কমেছে এক দশমিক ২৯ শতাংশ, চীনের সাংহাই সূচক কমেছে এক দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ও ভারতের সেনসেক্স সূচক কমেছে দশমিক ৬১ শতাংশ। এছাড়া এ অঞ্চলের অন্য সূচকগুলোও এদিন ছিল নি¤œমুখী ধারায়। ইউরোপের বাজারের মধ্যে লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক কমেছে এক দশমিক ৩২ শতাংশ, জার্মানির ডিএএক্স সূচক কমেছে এক দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফ্রান্সের সিএসসি সূচক কমেছে দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং স্টকস ৬০০ সূচক কমেছে এক দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া অন্য প্রধান সূচকগুলোও ছিল নি¤œমুখী।
সাম্প্রতিক সময়ে মেক্সিকো, কানাডা, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিবাদে জরিয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মার্চে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়া আমদানিতে ২৫ ও ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করে দেশটি। এর প্রতিক্রিয়ায় হুইস্কি, মোটরসাইকেল, জুতা, কয়েক ধরনের কাপড়, ওয়াশিং মেশিন ও কমলার রসসহ বেশকিছু পণ্যে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে ইইউ। গত শুক্রবার থেকে তা কার্যকরও হয়েছে। জোটের ২৮টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি করা প্রায় ৩২০ কোটি মূল্যের পণ্য থেকে এ শুল্ক নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ইউরোপ।
মার্কিন পণ্যে ইইউর শুল্ক কার্যকরের ঘটনাই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। শুক্রবারে টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘এ শুল্ক তুলে নেওয়া না হলে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ইউরোপের সব ধরনের গাড়িতে ২০ শতাংশ শুল্ক বসাবো।’
আমদানি করা স্বয়ংক্রিয় গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে কি না, মাসখানেক আগে থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। আগস্টের আগেই এ কাজ শেষ হবে বলে আশা মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের।
ইইউ থেকে আমদানি করা ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে এখনই আড়াই শতাংশ শুল্ক দিতে হয়; পিকআপ ট্রাকের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপ করা শুল্কের পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ শিল্পের সুরক্ষা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য দেশের ভেতরেই আরও চাকরির সুযোগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা বাৎসরিক সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে বসেছে নতুন শুল্ক। পাল্টা পদক্ষেপে হাজারের ওপর মার্কিন পণ্যে শুল্ক দিয়েছে বেইজিংও।
উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনার কথা বলে মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে নতুন মার্কিন প্রশাসনের। চীন ও ইউরোপের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ পাল্টাপাল্টি শুল্কের লড়াই বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে বলেই শঙ্কা বিশ্লেষকদের।