নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি প্রবৃদ্ধিতে গতির পরও বড় বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছর, যার ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও রয়ে গেছে বড় ঘাটতি। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ঘাটতির এই অঙ্ক ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম হলেও এর আগের ২০১৬-১৭ বছরের চেয়ে ৬৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। অর্থবছর শেষ হওয়ার দেড় মাস পেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, লাগামহীন আমদানিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাণিজ্যঘাটতি এক হাজার ৮১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারে উঠেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।
প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে মাত্র এক দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে আমদানি বেড়েছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানির পেছনে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৪৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। একই সময়ে রফতানি থেকে আয় হয়েছে তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৪২০ কোটি ডলার। সেবা খাতের বাণিজ্যে মূলত বিমা, বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা ব্যয় প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঘাটতিও কমেছে। ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল প্রায় দ্বিগুণ, ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ বছরে ঘাটতি ছিল ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।
সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামগ্রিক ভারসাম্যে এক কোটি ২০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই লেনদেনে ৮৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। সামগ্রিক ভারসাম্যে ঘাটতি থাকলে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কর্তন করে ঘাটতি পূরণ করা হয়।
বিদেশি বিনিয়োগ ও সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় গত অর্থবছরে সরকারের আর্থিক হিসাবে ৫৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। আগের বছরে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল আরও বেশি, ৯০১ কোটি ১০ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরের সব মিলিয়ে ৪৫০ কোটি ১০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৩২৯ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছে ২৫৪ কোটি ডলার। আগের বছরে এসেছিল ১৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবে নিট এফডিআই বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরে এখানে ১৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। আগের বছরে এসেছিল ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ বাংলাদেশে এসেছে ৫৯৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ বছরেরও প্রায় একই পরিমাণ ছিল, ৫৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।