Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:27 pm

বাণিজ্য ঘাটতি কমছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈদেশিক লেনদেনে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এ ঘাটতি প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের প্রায় দ্বিগুণ। শুধু বাণিজ্য ঘাটতিই নয়, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার। বর্তমানে আমদানি ব্যয় অধিকহারে বাড়ার কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করেছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ মোট ৩ হাজার ৫৮২ কোটি ডলার ব্যয় করেছে; যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের আট মাসে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে দুই হাজার ৪০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আট দশমিক শূন্য আট শতাংশ বেশি। এ হিসাবে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।
এদিকে গেল অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছিল দুই হাজার ৮৩৮ কোটি ডলার। একই সময়ে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল দুই হাজার ২২৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি আট মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬০৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
এদিকে, বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (্এলসি) খোলা ও আমদানি ব্যয় বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। চলতি অর্থবছরে প্রথম সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) এলসি খোলায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। গেল অর্থবছরের একই সময়ে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ১২ শতাংশের মতো। এ সময় খাদ্যপণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও জ্বালানি তেলের এলসি খোলার হার উল্লেখযোগ্য বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্যপণ্যের এলসি খোলার হার, যা প্রায় ২১৫ শতাংশ।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে। এছাড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে এ ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। এ খাতেও নি¤œগতি রয়েছে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। তবে নির্বাচনি বছরে ব্যাপকহারে আমাদানি বাড়ায় অর্থপাচারের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের আমদানি যে হারে হয়েছে, সে হারে রফতানির প্রবৃদ্ধি বাড়েনি। এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। এ লেনদেনে ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদি হলে তা অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে প্রথম আট মাসে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে সেবা খাতে ঘাটতি ছিল ২১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য পরিমাপ করা হয়।
অন্যদিকে, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চলতি হিসেবে ঘাটতি ছিল মাত্র ৯৬ কোটি ডলারের মতো। প্রসঙ্গত, রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যেটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি।