বর্তমানে এডি রেশিও ৮২ থেকে ৮৫’র মধ্যে থাকা উচিত; কিন্তু অনেক ব্যাংকের তা ৯০-৯২ শতাংশ হয়ে গেছে। এটি কমিয়ে আনতেই হবে। অন্য একটি কারণের জন্যও তা প্রয়োজন। আমাদের আমদানি এখন ২৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। প্রথম পাঁচ মাসেই প্রায় সাত দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। আর এটিকে যদি আমরা ১২ মাসে রূপান্তর করি, তাহলে ১৮ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে। এমন পরিস্থিতি দেশের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। আমাদের ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে কখনোই বাণিজ্য ঘাটতি হয়নি। এটি অস্থিতিশীল অবস্থা এবং একে টেনে ধরতে হবে। মানে, আমদানিকে কমাতে হবে ও রফতানি বাড়াতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আকতার হোসেন সান্নামত, এফসিএ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা মুদ্রানীতির প্রধান কাজ। কিন্তু মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রধান লক্ষ্য সামগ্রিক অর্থনীতিকে কীভাবে স্থিতিশীল রাখা যায়Ñসেদিকে নজর দেওয়া। দেশের মানি মার্কেটে বড় রকমের টানাপড়েন চলছে। আর এটি একদিনে হয়নি, বেশ কিছুদিন ধরেই এর সৃষ্টি হয়েছে এবং তার সম্মিলিত প্রভাবটি আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। একই সঙ্গে ব্যালেন্স পেমেন্টেও বড় ধরনের টানাপড়েন চলছে। ফলে এ দুটি সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মুদ্রানীতিকে খুব সংযতভাবে পরিচালিত করতে হচ্ছে। এখানে তারা এডিআর (অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও) কমিয়ে ঋণ কমানোর চেষ্টা করছে। কারণ ঋণের হার ১৮-১৯ শতাংশে চলে গেছে, যা একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেখানে ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি হচ্ছে মাত্র ১১ শতাংশ; ফলে এ প্রবৃদ্ধি দিয়ে ১৯ শতাংশ লেন্ডিং প্রবৃদ্ধি সমন্বয় করা সম্ভব নয়। এডি রেশিওটি ৮২ থেকে ৮৫’র মধ্যে থাকা উচিত; কিন্তু অনেক ব্যাংকের ৯০-৯২ শতাংশ হয়ে গেছে। কাজেই এটি চলতে দেওয়া ঠিক নয়; তা কমিয়ে আনতেই হবে। তাছাড়া এটি অন্য একটি কারণের জন্যও প্রয়োজন। আমাদের আমদানি এখন ২৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। এটি কখনোই টেকসই হবে না। প্রথম পাঁচ মাসেই প্রায় সাত দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। আর এটিকে যদি আমরা ১২ মাসে রূপান্তর করি, তাহলে ১৮ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে। এমন পরিস্থিতি দেশের ইতিহাসে আগে কখনও হয়নি। আমাদের ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে কখনোই বাণিজ্য ঘাটতি হয়নি। ফলে এটি একটি অস্থিতিশীল পর্যায় এবং এটিকে টেনে ধরতে হবে। মানে আমদানিকে কমাতে হবে ও রফতানি বাড়াতে হবে। যদিও এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
আকতার হোসেন সান্নামত বলেন, দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন নেতিবাচক অবস্থায় চলে যাচ্ছে। কারণ আমাদের রফতানি কম ও আমদানি অনেক বেশি। পাশাপাশি শ্রমিক রফতানি বাড়ছে কিন্তু রেমিট্যান্স কমছে। কারণ এখন অনেক অনুমোদনবিহীন উপায়ে অর্থ আসছে। ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট হবে, তা আমরা অনেক আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম। কারণ সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে এফডিআরের ওপর যে লভ্যাংশ দিচ্ছে, তার ব্যবধান অনেক বেশি ছিল। সঞ্চয়পত্রের ওপর ১১ দশমিক পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দিত এবং এফডিআরের ওপর ছয়-সাত শতাংশ দিত। ফলে সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল; কারণ সেখানে ব্যাংক খাতের চেয়ে লাভ বেশি। যে কারণে ব্যাংক খাতে আগে থেকেই ডিপোজিটরের পরিমাণ কম ছিল। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু জানা দরকার মূল্যস্ফীতি কেন হচ্ছে এবং আমাদের খরচ কোথায় কোথায় বেশি হচ্ছে?
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম