Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:31 am

বাণিজ্য ঘাটতি রোধে রপ্তানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিন

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমদানি-রপ্তানির ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাধারণভাবে চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেয়া আছে। এর প্রভাবে আমদানি কমেছে। তবে একই সময় রপ্তানি আয়ও কমে গেছে। আশানুরূপ হারে বাড়েনি রেমিট্যান্স।

ফলে এখনও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হ?চ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতির সঙ্গে চলতি হিসাবের ঘাটতি বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত সময়পর্বের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে মাস পর্যন্ত সময়ে তিন হাজার ৭৩৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

এ সময় আমদানি হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। এতে অর্থবছরের ১১ মাসে দুই হাজার ২২ কোটি (২০ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার সময় শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেয়া আছে। এসব কারণে আমদানি কমেছে।

কোন কোন খাতে আমদানি বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বৃদ্ধির কারণে সার্বিক আমদানি বাড়তে পারে। এটি ইতিবাচক। দেখতে হবে প্রকৃতপক্ষে এ খাতে আমদানি বাড়ছে কি না, কতটা বাড়ছে। অনেক সময় দেখা যায়, ওভার ইনভয়েসিং করে বা বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ পাচার হয়। তাই আমদানি ব্যয়ের আড়ালে অর্থ পাচার হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে বড় বড় অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্পের জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। এ কারণেও বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হতে পারে। কিন্তু সেটির পরিমাণও জানা জরুরি।

উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ডুয়িং বিজনেসসহ বিভিন্ন জরিপ ও প্রতিবেদনে দেশ যাতে এগিয়ে থাকে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ লক্ষ্যে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও নিরাপত্তা প্রশ্নে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। বিদেশিরা সাধারণত এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোনো দেশে বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নেয়। বিদেশি বিনিয়োগ বাণিজ্য ঘাটতি রোধে ভূমিকা রাখবে। প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে।