Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:08 am

বাণিজ্য ঘাটতি রোধে রপ্তানি বহুমুখীকরণে উদ্যোগ নিন

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে স্বস্তি আসার পর পণ্য বাণিজ্য, আর্থিক হিসাব এবং সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ ডিসেম্বরে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ১৭ কোটি ডলার। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কমেছে ৮ কোটি ডলার। আর সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি কমেছে ১২২ কোটি ডলার। একই সময়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত বেড়েছে ১৪৬ কোটি ডলার। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি ব্যয় কমে আসা ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতিও নিম্নমুখী রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবাসী আয়ে ভর করে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ বাড়ছে।

কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমদানি-রপ্তানির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কোন কোন খাতে আমদানি বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বৃদ্ধির কারণে সার্বিক আমদানি বাড়তে পারে। এটি ইতিবাচক। দেখতে হবে প্রকৃতপক্ষে এ খাতে আমদানি বাড়ছে কি না, কতটা বাড়ছে। অনেক সময় দেখা যায়, ওভার ইনভয়েসিং করে বা বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ পাচার হয়। তাই আমদানি ব্যয়ের আড়ালে অর্থ পাচার হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমানে কয়েকটি বড় মেগা প্রকল্পের জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। এ কারণেও বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হতে পারে। সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। তবে ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।

খাতভিত্তিক প্রকৃত তথ্য জানা গেলেই ঘাটতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া সহজ হবে।

বাণিজ্য ঘাটতি মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হলে রপ্তানি বাড়াতে হবে, পণ্য বাড়াতে হবে, নতুন বাজার খুঁজতে হবে। কোনো দেশের সঙ্গে শুল্কবৈষম্য থাকলে তাতে সামঞ্জস্য আনতে হবে।

সেবা খাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। অথচ এ খাতে আমাদের আয় তুলনামূলকভাবে কম। ঘাটতি কমাতে দেশীয় পেশাজীবীদের নিয়োগ দিতে হবে। আমাদের আয়ের একটি বড় উৎস রেমিট্যান্স। এর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ভোগের সম্পর্ক রয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে হবে। শিল্পপণ্য ও সেবার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেলে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব।

যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, তা কমিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি। এটি কমাতে যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকেবে বলেই প্রত্যাশা।