Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:12 am

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া সাইট খুলে সিপি জালিয়াতি

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য ছাড় করতে অভিনব পন্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) জালিয়াতি করেছে ঢাকার এক প্রতারক আমদানিকারক। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি মালয়েশিয়া থেকে নেসলে ব্র্যান্ডের গুঁড়োদুধ আমদানি করে ধরা পড়ায় এই আমদানিকারককে ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করে কাস্টমস। তারপর কাস্টমস শর্তযুক্ত পণ্যটির চালানটি খালাস করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অথবা আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সিপি দাখিলের আদেশ দিলে সেখানেও জালিয়াতি করে এই আমদানিকারক।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, এই প্রতারক আমদানিকারক চট্টগ্রামের আরেক প্রতারক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই জালিয়াতি করে আসছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খান এন্টারপ্রাইজ নামের ওই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নিজেদের পণ্য খালাসের সঙ্গে ২৮ টন ফেব্রিক্স-ভর্তি একটি কনটেইনার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে। ওই সময় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের হাতে আটক হওয়া খান এন্টারপ্রাইজের জেটি সরকার মো. গোলাম ফারুক খান বর্তমানে জেলহাজতে আছেন। খান এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম মাওয়াল খান শেয়ার বিজকে জানিয়েছিলেন, এসব অপকর্মের সঙ্গে মো. গোলাম ফারুক খান জড়িত আছেন।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন এআইআর শাখা ও বর্তমানে খাদ্যপণ্য আমদানি বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার নূরে হাসনা সানজিদা অনুসূয়া শেয়ার বিজকে বলেন, ঢাকার মৌলভী বাজারের আমদানিকারক মেসার্র্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ পিনাট ও অলিভ অয়েল আমদানির ঘোষণায় মালয়েশিয়া থেকে ২০ টন ঘোষণাবহির্ভূত নেসলে ব্র্যান্ডের শিশুদের গুঁড়োদুধ নিয়ে আসে। চালানটি খালাস করতে চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ  এজেন্ট খান এন্টারপ্রাইজ চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু গোপন সংবাদ থাকায় আগে থেকে চালানটি এআইআর লক করা ছিল।

পরে চালানটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে ২১ হাজার ৬০ কেজি গুঁড়োদুধ পাওয়া যায়, যা ‘আমদানি নীতি আদেশ, ২০১৫-১৮’-এর অনুচ্ছেদ ১৭ অনুযায়ী শর্তযুক্ত পণ্য। তাই মিথ্য ঘোষণা প্রমাণিত এবং আমদানি নীতি আদেশ শর্ত পালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এই আমদানিকারকে ৬৬ লাখ টাকা ব্যক্তিগত জরিমানা এবং ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা আরোপ করেন। তারপর বাণিজ্য মান্ত্রণালয় অথবা আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) দাখিল সাপেক্ষে খালাসের আদেশ দেওয়া হয়।

তারপর এই আমদানিকারক গত ১১ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সিপি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দাখিল করেন। তারপর ১৩ তারিখে ক্লিয়ারেন্স পারমিট-বিষয়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি পত্র এ দপ্তরে দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। উভয় পত্রের মর্মার্থ অনুযায়ী বিএসটিআইয়ের ছাড়পত্র এবং কমিশনারের বিচারাদেশ অনুযায়ী শুল্ককর ও জরিমানা প্রদান সাপেক্ষে পণ্য চালানটি খালাসের জন্য ক্লিয়ারেন্স পারমিট প্রদান করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উভয় পত্রই জাল ছিল।

তিনি বলেন, শুল্কায়ন গ্রুপ কর্তৃক দাখিলকৃত ক্লিয়ারেন্স পারমিট এবং অন্য দলিলাদি যাচাইকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পারমিটের হেডিংয়ে যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা রয়েছে, তাতে দাখিলকৃত ক্লিয়ারেন্স পারমিটের কপিও পাওয়া গেছে। এতে শুল্কায়ন গ্রুপের বিষয়টি সন্দেহ হলে ক্লিয়ারেন্স পারমিট স্বাক্ষরকারী উপ-সচিবের সঙ্গে সরাসরি ফোন আলাপ করে জানা যায়, দাখিলকৃত সিপিটি জাল ও ওয়েবসাইটটি ভুয়া।

প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জরিকৃত পত্রে বলা হয়েছে ‘ঘোষণাবহির্ভূত আমদানিকৃত পণ্যটি শিশুখাদ্য ও বিএসটিআইয়ের আওতায় শর্তযুক্তভাবে আমদানিযোগ্য হওয়ায় বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশের চতুর্থ অধ্যায়ের ১৭নং অনুচ্ছেদের বিধানগুলো প্রতিপালিত হয়নি বিধায় সিয়াম এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ক্লিয়ারেন্স পারমিট ইস্যু করার কোনো সুযোগ নেই মর্মে নির্দেশক্রমে অবহিত করা হলো।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, এই আমদানিকারক প্রথমত মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি কারে কাস্টমস আইন লঙ্ঘন করেছে। পরে ওই পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পারমিট জালিয়াতি করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে তাতে ওই জাল ক্লিয়ারেন্স পারমিট আপলোড করে কাস্টমস বিভাগকে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করার মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধ করেছে। ওই জালিয়াতির কারণে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে এ দপ্তর থেকে আইসিটি অ্যাক্ট ও পেনাল কোডের অধীনে এফআইআর দায়ের করা হবে।