Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:07 am

বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোয় জোর

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বের দুই পরাক্রমশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ দুই নেতা প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নেন। স্থানীয় সময় সোমবার আর বাংলাদেশ সময় গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাড়ে তিন ঘণ্টার শীর্ষ সম্মেলনের বৈঠকে মিলিত হয়ে বিশ্বের প্রতি দায়িত্বের অংশ হিসেবে সংঘাত এড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একই সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য, যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয় বৈঠকে। খবর: বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স।

বাইডেনকে ‘পুরোনো বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করে শি জিনপিং বলেন, মানবাধিকার ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তাদের হতে হচ্ছে, তা উতরাতে দুপক্ষ থেকেই যোগাযোগ আর সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তবে তাইওয়ান ইস্যুতে দুই নেতাই একে অপরকে সতর্ক করেন। জিনপিং বলেন, তাইওয়ানের স্বাধীনতার উৎসাহ দেয়া হবে ‘আগুন নিয়ে খেলা’।

বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলস থেকে বৈঠকে যোগ দেন শি জিনপিং। ভিডিও কনফারেন্সের অপর প্রান্তে হোয়াইট হাউসের রুজভেল্ট রুমের কনফারেন্স টেবিল থেকে যোগ দেন জো বাইডেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমার হয়তো আরও আনুষ্ঠানিক রেওয়াজ মেনে শুরু করা উচত ছিল। কিন্তু আপনি আর আমি তো কখনোই নিজেদের মধ্যে অত আনুষ্ঠানিকতায় যাইনি।

বাণিজ্য, মানবাধিকার ও দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক কর্মকাণ্ড ঘিরে বেইজিং-ওয়াশিংটন বিরোধ ও উত্তেজনার মধ্যে দুই নেতার এ বৈঠকের ওপর নজর ছিল বিশ্ববাসীর।

কভিড-১৯-এর উৎস থেকে শুরু করে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করাসহ নানা ঘটনায় ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। দুই নেতার আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশের বিরোধ খানিকটা হলেও প্রশমিত হবে বলে আশা বিশ্লেষকদের।

বাইডেন ও শি’র মধ্যে সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর কথা হয়েছিল। দুই নেতার দেড় ঘণ্টার ওই কথোপকথনে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও কভিড পরিস্থিতি প্রাধান্য পেয়েছিল। তবে বাইডেন গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর দুই দেশের মধ্যে এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক।

বৈঠকে বাইডেন বলেন, ‘আমার মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধু আমাদের দুই দেশের ওপর নয়, সত্যি কথা বলতে, পুরো বিশ্বের ওপরই এটা প্রভাব ফেলে।

দোভাষীর মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেয়া শি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনীতির দেশ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ও সহযোগিতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

দুই নেতার বৈঠকের শুরুর দিকের একটি অংশ হোয়াইট হাউসে অল্প কিছু সাংবাদিককে দেখার সুযোগ দেয়া হয়। পরে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, যেখানে কেবল দুই প্রেসিডেন্টের শীর্ষ উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।  

সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট শি বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে প্রাণবন্ত ও স্থিতিশীল একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। শি জিনপিং বলেন, চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সবার জন্য লাভজনক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়া এবং নিজেদের ঘরের সমস্যা সামলানোর পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক দায়িত্বগুলোও পালন করা।  

দুই দেশের প্রতিযোগিতা যেন সংঘাতে পরিণত না হয়, সেজন্য সাধারণ বিবেচনাবোধ থেকেই একটি সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, আপনার সঙ্গে আগেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। সব দেশকেই এ রাস্তায় একই নিয়ম মানতে হয়।

বিশ্লষকরা বলছেন, দুই নেতার এ বৈঠক থেকে বাণিজ্য বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছেন না যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আর সেবা কেনার প্রতিশ্রুতি পূরণে অনেকটাই পিছিয়ে আছে চীন। আবার চীনা পণ্যের শুল্ক বাধা দূর করার বিষয়েও ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র।