নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পরিবর্তনে নতুন খসড়া আইনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ নামে প্রতিস্থাপিত হবে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তিত হয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন হয়েছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে যেসব ধারা ছিল, সেই ধারা রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জনগণের সরকার। সেজন্য আমরা সেটাকে যেসব মিসইউজ এবং অ্যাবিউজ হয়, সেগুলো বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি আইনের মাধ্যমে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে বহু ধারা সংশোধন হয়েছে। এটার আজকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল নয়, পরিবর্তন হচ্ছে।’
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬-সহ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়।
গত ২৫ জুলাই সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধির সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, আমরা অবশ্যই এ আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী সেপ্টেম্বরেই এ সংশোধনী জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে এবং আশা করছি পাস হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কী ধরনের সংশোধন আনা হচ্ছেÑএমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটার জন্য আপনাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি মনে করি আপনাদের পরামর্শ সরকারের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটুকু বলতে পারিÑডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের যে সংশোধন হচ্ছে তাতে আপনারা সবাই খুশি হবেন।
যেসব ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে নতুন যে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ করা হচ্ছে সেখানে অনেকগুলো ধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে নতুন একটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে খসড়া আইনের অনুমোদন নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, পরিবর্তন করা হয়েছে। যদি এখন বলি, বাতিল করা হয়েছে, তাহলে আপনারা প্রশ্ন করবেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব ধারাই-তো এ আইনে রয়েছে। তাহলে আপনি কেন বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। যে কারণে আমি পরিবর্তন শব্দটি ব্যবহার করেছি।
প্রথমত, এ আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেগুলো এখানে অক্ষুণœ রাখা হয়েছে। সেইগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারা, যেমন মানহানির যে ধারাটা ছিল, সেই ধারায় আগে শাস্তি ছিল কারাদণ্ড। সেই কারাদণ্ডের জায়গায় এখন জরিমানার বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ মানহানির একমাত্র সাজা জরিমানা।
তৃতীয়ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১-এ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের পতাকা ও জাতীয় সংগীতÑএসব নিয়ে যদি কেউ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, তাহলে সেটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। সেটির সাজা ছিল ১০ বছর কারাদণ্ড, তা কমিয়ে এখন সাত বছর করা হয়েছে।
এছাড়া, মন্ত্রী জানান, অনেকগুলো ধারার মধ্যে ছিল, দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে সেই সাজা দ্বিগুণ হয়ে যেত কিংবা সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হতো। প্রত্যেকটা ধারায় যেখানে দ্বিতীয়বার সাজার কথা আছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেগুলো টেকটিক্যাল অপরাধ, যেগুলো সাইবার সিকিউরিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, সবসময়ই জনগণের কথা শোনার সরকার, যেটাকে ইংরেজিতে আমরা বলি, উই আরও অ্যা লিসিনিং গভর্নমেন্ট। এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অপব্যবহার কিংবা মিসইউজ রোধ করতে আমরা নাম পরিবর্তন করেছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন ও নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনেক জায়গায় সাজার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল, সেটি কমানো হয়েছে। যেখানে উপধারা দিয়ে কিংবা দ্বিতীয়বার করলে সাজা দ্বিগুণ বলা হয়েছিলÑ সেই সব ধারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের যে ধারাটি ছিল, সেটি কি পরিবর্তন হয়েছে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল অপরাধের ক্ষেত্রে অনেক সময় যে যন্ত্র দিয়ে সেটি করা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো জব্দ করা হয় না, তাহলে সাক্ষ্যপ্রমাণ হারিয়ে যাওয়ার একটা শঙ্কা থাকে। সে কারণে আমার মনে হয়, ৪৩ নম্বর ধারাটি থাকা প্রয়োজন। এ আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ নম্বর ধারায় যে প্রভিসন ছিল, সেটি আছে।
মোট কয়টি ধারায় পরিবর্তন এসেছেÑজানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো ধারা পরিবর্তন হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের মামলাগুলো চলবে। তবে মামলার যে কার্যক্রম সেটি সাইবার নিরাপত্তা আইনে চলবে। মন্ত্রী জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আইনটি উঠবে। সেখানে এ আইন পাস করা হবে। কারাদণ্ড বাতিল, জরিমানা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ পরিবর্তন করে নতুন যে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ করা হচ্ছে সেখানে মানহানির মামলায় সাংবাদিকদের কারাদণ্ডের বিধান থাকবে না। তবে থাকছে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। অনাদায়ে ৩ বা ৬ মাসের কারাদণ্ড। এ সাজা কেবল জরিমানা না দিতে পারলেই ভোগ করতে হবে।