রহমত রহমান: দেশে নদী, রেল ও সড়ক রুটে ১৮৪টি এলসি (শুল্ক) স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে সচল রয়েছে ৪৪টি। বাকি ১৪০টি স্টেশন প্রায় দেড় দশক ধরে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। অবকাঠামো না থাকা, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়া এবং ঝুঁকি থাকায় বেশিরভাগ স্টেশন অকার্যকর হয়ে গেছে। অকার্যকর থাকা ১৪০টির মধ্যে সাতটি স্টেশন রেখে বাকি ১৩৩ স্টেশন বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সম্প্রতি এনবিআরের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সহসাই শুল্ক স্টেশন-সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এছাড়া ছয়টি প্রকল্প ও এলপিজি টার্মিনালকে এরই মধ্যে এলসি স্টেশন ঘোষণা করেছে এনবিআর। নতুন প্রজ্ঞাপনে এসব স্টেশনকে প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিলুপ্ত ঘোষণা করা এসব স্টেশন র্দীঘদিন ধরে বন্ধ এবং অদূর ভবিষ্যতে চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ১৩ অক্টোবর এনবিআর সম্মেলন কক্ষে চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে ‘স্থল কাস্টমস স্টেশন-সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপন চূড়ান্তকরণ’ বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সভায় এনবিআর সদস্য (কাস্টমস: নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই স্থল কাস্টমস স্টেশন-সংক্রান্ত এনবিআরের প্রজ্ঞাপন বর্তমানে কার্যকর রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় এই প্রজ্ঞাপন সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতার আলোকে প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে নতুন একটি প্রজ্ঞাপন জারির উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর, যার মধ্যে প্রথমত, বর্তমান প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৮৪টি শুল্ক স্টেশন রয়েছে, যার মধ্যে যেসব এলসি স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ এবং অদূর ভবিষ্যতে চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে, এমন ১৪০টি এলসি স্টেশন সুর্দীঘকাল ধরে প্রজ্ঞাপনে অননুমোদিত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো প্রজ্ঞাপনে আর না রেখে তা বিলুপ্ত করা হবে। দ্বিতীয়ত, কিছু স্টেশনের রুট (নদী, রেল, সড়ক রুট সংযোজন ও সংশোধন) হালনাগাদ করা হবে। তৃতীয়ত, বিভিন্নভাবে একক পণ্য বা সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের পণ্য চালানের জন্য ঘোষিত স্টেশনগুলোকে সমন্বিত প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, সভায় ১৪০টি স্টেশনের মধ্যে ছয়টি বহাল রেখে ১৩৪টি বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়। ছয়টির মধ্যে রয়েছেÑগোদাগাড়ির প্রেমতলী, বরিশাল, চাঁদপুর, আরিচাঘাট, মুজিবনগর ও আংটিহারা। তবে সভায় প্রেমতলী, আরিচাঘাট, মুজিবনগর, আংটিহারা, আমনুরা রেল স্টেশন, রাজশাহী, বরিশালÑএই সাতটি স্টেশন বহাল রেখে বাকি ১৩৩টি অননুমোদিত এলসি স্টেশন বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে ঘোষিত পাঁচটি এলসি স্টেশনকে প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়, যার মধ্যে রয়েছে মাতারবাড়ী, রামপাল, বিএম এনার্জি এলপিজি টার্মিনাল, জেএমআই এলপিজি টার্মিনাল, ইউনিটেক্স এলপিজি টার্মিনাল ও প্রিমিয়ার এলপিজি টার্মিনাল। দর্শনা, বিরল, রহনপুর ও চিলাহাটিকে সড়ক রুট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণ করার পর নতুন রুট কার্যকর হবে। অপরদিকে ভারতীয় অংশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে চিলাহাটি-হলদিবাড়ী ও রহনপুর-সিঙ্গাবাদ রুটে নেপাল ও ভুটানকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিবিরবাজার স্টেশনে বিদ্যমান সড়ক রুটের পাশাপাশি দাউদকান্দি-সোনামুড়া নৌ-রুট সংযোজন করা হবে।
অনুমোদিত সব এলসি স্টেশনের মাধ্যমে সব আমদানি পণ্য আমদানির অনুমতি প্রদানের বিষয়টি আলোচনা হয়। এতে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সব এলসি স্টেশনের মাধ্যমে সব আমদানিযোগ্য পণ্য আমদানির সুযোগ প্রদান করা হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। আরও দুই ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বলেন, বেনাপোলের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে তুলনা করে সব এলসিতে ঢালাওভাবে পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতা আমদানির ক্ষেত্রে বেনাপোলসহ অন্যান্য এলসিএস-এ বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখাসহ সব এলসিএস-এ বর্তমানে অনুমোদিত সব পণ্য তালিকা বহাল রাখার জন্য তারা অনুরোধ করেন। সভায় এলসি স্টেশনগুলোর অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্দরের সক্ষমতা এবং ঝুঁকি বিবেচনাপূর্বক এলসি স্টেশনের মাধ্যমে আমদানিযোগ্য পণ্য তালিকা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি এনবিআর বিবেচনা করবে। এছাড়া এলসি স্টেশনগুলো কোন জেলা ও উপজেলায়, তা নতুন প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হবে।