বেসরকারি পর্যায়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও রিউমাটোলজি বিভাগ (বাত-ব্যথার চিকিৎসাসেবা) এখনও চালু হয়নি। তবে সরকারি পর্যায়ে ২০২০ সালে দেশের পুরোনো আটটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৩৩ জন রিউমাটোলজিস্টের পদ সৃষ্টি হয়েছে। বাতব্যথা রোগের ওপর শিক্ষা কার্যক্রমও অপ্রতুল। এসব রোগের চিকিৎসকের (রিউমাটোলজিস্ট) সংখ্যাও দেশের জনসংখ্যার তুলনায় কম। ফলে অনেক মানুষ ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। আর এসব সমস্যা সমাধানে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলে রিউমাটোলজি বিভাগ চালু করার দাবি করেছেন চিকিৎসকরা।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, গিটে ব্যথার উৎপত্তি শরীরের অনেক ভেতরে। আমাদের চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত মেধা আছে। তবে ইচ্ছা শক্তি ও ডেডিকেশন বাড়াতে হবে। তরুণ চিকিৎসকদের অনুরোধ করব, আপনাদের শিখতে হবে। আপনার শেখা আপনাকেই শিখতে হবে। ভালো শেখার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার বস হবে মূল প্রশিক্ষক।
তিনি বলেন, ভালো ডাক্তার হন। দেশ বিদেশে কদর আছে। যদি ফাঁকি দেন, বুঝতে হবে, সেই ফাঁকি নিজেকে দিচ্ছেন। কারণ রোগীরা বুদ্ধিমান, তারা কিন্তু আপনাকে ধরে ফেলবে। তারাই সবচেয়ে বড় ডাক্তার। তাদের ফাঁকি দিচ্ছেন মানে নিজেকে ফাঁকি দিচ্ছেন।
চিকিৎসকদের জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণের অভাববোধ করছেন জানিয়ে ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ আরও বলেন, আমরা আসলে মানসম্মত ট্রেনিংয়ের জায়গায় আটকে আছি। এজন্য ছাত্রদের চেয়ে ফ্যাকাল্টিদের দোষ বেশি। কারণ তারা ফাঁকি না দিলে ছাত্ররা ফাঁকি দিতে পারবে না। চিকিৎসকরা যে যে বিভাগেই কাজ করুক তাকে ইন্টারনাল মেডিসিনের ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রিউমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিএসএমএমইউ ও বিশ্ববিদ্যালয়টির রিউমাটোলজি বিভাগ এখন পর্যন্ত ৬০ জন বিশেষজ্ঞ রিউমাটোলজিস্ট তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। আরও ৩০ জন রিউমাটোলজিস্ট এ বিষয়ে দেশে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। তবে বাত রোগীদের দোরগোড়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পৌঁছানো সময়ের দাবি। এজন্য পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ সমভাবে যেমন দরকার, তেমনি পাস করা রিউমাটোলজিস্টদের যথাযথ পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও রিউমাটোলজি বিভাগ (বাত-ব্যথার চিকিৎসাসেবা) এখনও চালু হয়নি। তবে সরকারি পর্যায়ে ২০২০ সালে দেশের পুরোনো আটটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৩৩ জন রিউমাটোলজিস্টের পদ সৃষ্টি হয়েছে।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষ সুস্থ থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। কারণ অসুস্থ থাকলে তারা অফিসে যেতে পারেন না। আর সেটি যদি বাত-ব্যথা হয়, তাহলে অসুবিধা আরও বেড়ে যায়। তাই শুরুতেই ভালো চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ ব্যথার কষ্টে থাকা মানুষ কোনো কাজ করতে পারেন না। ফলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর।
তিনি রিউমাটোলজি বিভাগের শূন্যপদ পূরণের আশ্বাস দেন।
গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বিবদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এসব কথা জানান রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাতের ব্যথার প্রকোপ ও ব্যথা বাড়তে থাকে। শতাধিক ধরনের আর্থ্রাইটিসে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভোগেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ বেশি সমস্যায় পড়ছেন। যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে অসহায় ও অক্ষম জীবনযাপন করেন। তাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজে সচেতন হওয়া পাশাপাশি সঠিকভাবে রোগটি শনাক্ত করা।
রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মেডিসিন ও রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া প্রমুখ।
বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বাতের ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসায় সাধারণ ভুল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ ও জয়েন্টে ইনজেকশন ব্যবহারের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।