বান্দরবানের পাহাড়ে বাড়ছে লেবুর বাণিজ্যিক আবাদ

এমএ শাহরিয়ার, বান্দরবান: বান্দরবানের দক্ষিণাঞ্চলের পাহাড়ে বাড়ছে লেবুর বাণিজ্যিক আবাদ। পোকার আক্রমণ কম হওয়ায় এবং চাহিদা থাকায় লাভজনক লেবু চাষে ঝুঁকছেন পাহাড়ের চাষিরা। হরেক রকমের লেবু বিক্রি করে বছরে কয়েক কোটি টাকা আয় করছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় এ বছর লেবু বাগানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৯৬ হেক্টর। এ থেকে ১৪ হাজার ৪৪৩ মেট্রিক টন লেবু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৬৬৩ মেট্রিক টন বেশি। গত বছর জেলায় লেবু চাষ হয়েছিল এক হাজার ৬৮৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ১৩ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের মাটি লেবু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পাহাড়ের ঢালে ও সমতল জায়গায় লেবু চাষ হচ্ছে। বান্দরবান জেলায় এখন চারটি জাতের লেবু চাষ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, স্থানীয় দেশীয় জাত, এলাচ লেবু, কাগজি লেবু এবং সিডলেস লেবু। তবে এগুলোর মধ্যে স্থানীয় দেশীয় জাতের লেবুর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সুগন্ধিযুক্ত এলাচ লেবু এবং কাগজি লেবু চাষের পরিমাণও বাড়ছে আশানুরূপ। লেবু চাষে পোকার আক্রমণও খুবই কম। তবে মাকড়সার আক্রমণে কিছু ক্ষেত্রে গাছ শুকিয়ে যায়। এছাড়া গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে ফলন কমে যায় বলে জানান চাষিরা।

সোনাইছড়ি ইউনিয়নের লেবু চাষি ফরিদুল আলম ও মুমু মারমা বলেন, সোনাইছড়ি ইউনিয়নে প্রায় ১০০ একরের মতো জমিতে লেবু চাষ হয়। বছরে এখানের চাষিরা লেবু বিক্রি করে কমপক্ষে ৪৫ লাখ টাকা আয় করে। ১০০ লেবু ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই লেবু কিনে নিয়ে যান। এছাড়া স্থানীয় হাটবাজারগুলোতেও লেবুর বেশ চাহিদা রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির লেবু চাষি আবদুর রহিম ও মোজাফ্ফর বলেন, লেবু চাষ খুবই লাভজনক। বছরে ছয় মাসের অধিক সময় উৎপাদন হয় লেবু। তাদের দুজনের ১৫ একর জমিতে লেবু বাগান রয়েছে। এ বছর লেবুর উৎপাদনও ভালো হয়েছে। বাগান থেকে উৎপাদিত লেবু বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রত্যেকের সাত থেকে আট লাখ টাকা আয় হয়। তবে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে লেবু চাষ আরও সম্প্রসারিত করে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে তারা জানিয়েছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ছলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমার নিজেরও তিন একর লেবু বাগান রয়েছে। এ অঞ্চলে লেবুর আবাদ সবচেয়ে বেশি। চাষিদের কাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ব্যবসায়ীদের বিক্রি করি। ১০০ লেবু চাষিদের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায় কিনে ব্যবসায়ীদের কাছে স্বল্প লাভে সরবরাহ করি। এতে বছরে আমার কয়েক লাখ টাকা আয় হয়।’

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. একেএম নাজমুল হক জানান, লেবু জাতীয় ফসলের চাষ বাড়াতে পাহাড়ে একটি উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রদর্শনী প্লট করে দেয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগের অর্থায়নে। এ অঞ্চলে লেবু চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। লেবু লাভজনক চাষ। পোকার আক্রমণ কম এবং চাহিদা থাকায় লেবু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরাও।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০