পর্যটকদের আগমনে চাঙা পাহাড়ের অর্থনীতি

বান্দরবানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পর্যটন খাত

এমএ শাহরিয়ার, বান্দরবান : দীর্ঘ লকডাউনের পর শীতে পর্যটকদের আগমনে চাঙা হচ্ছে পাহাড়ের অর্থনীতি। বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় ব্যস্ত বান্দরবানে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও। শীত যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে পর্যটননির্ভর পাহাড়ের মানুষগুলোর জন্য। শীতের পরশে শিশিরভেজা সকালে ও পড়ন্ত বিকালে পর্যটন স্পটগুলোয় ভ্রমণপিপাসু মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় বদলাতে শুরু করেছে দর্শনীয় স্থানগুলোর দৃশ্যপট।

জানা গেছে, শীতে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান জেলায় বেড়ানোর জন্য প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে পাহাড়ে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ছুটির দিন মানেই পর্যটকের বাড়তি চাপ। গত কয়েক দিনে বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান পাহাড়ের চূড়ায় সরকারি অর্থায়নে গড়ে তোলা ট্যুরিস্ট স্পট নীলাচল, বাংলার দার্জিলিং-খ্যাত চিম্বুক পাহাড়, সেনানিয়ন্ত্রিত নীলগিরি রিসোর্ট, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, শৈলপ্রপাত, স্বর্ণমন্দির, নীল দিগন্তসহ দর্শনীয় স্থানগুলোয় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের। পর্যটকদের পদচারণে মুখরিত ছিল জেলার অন্যতম পর্যটন স্পটগুলো।

অপরদিকে শীত মৌসুমই হলো পাহাড়ের অরণ্যের জেলা বান্দরবানের দুর্গম এলাকার দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে পার্বত্য এই জনপদের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা বান্দরবানের পাহাড়গুলো দূর থেকে দেখেই মনে হয় যেন বরফের কোনো স্তূপ। প্রকৃতি যেন সবটুকু উজাড় করে দিয়ে পেখম মেলে বসে আছে সৌন্দর্য বিকাশে। যান্ত্রিক জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে এখন ভিড় জমাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলার পর্যটকেরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাহাড়ে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এখানকার পাহাড়ি-বাঙালি মানুষগুলোর রুটি-রুজিও। পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হস্তশিল্পের তৈরি শোপিস, তাঁতের কাপড় ও পাহাড়ে উৎপাদিত ফলমূল বিক্রি বেড়েছে অনেক। এতে চাঙা হয়ে উঠেছে পাহাড়ের অর্থনীতিও। পর্যটকবাহী ট্যুরিস্ট গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবসায়ও প্রাণ ফিরেছে।

বেড়াতে আসা পর্যটক ওয়াহিদ মিজান, অপূর্ব ও রেশমী ফারহান বলেন, দীর্ঘদিন ঘরবন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে সবুজ পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি অন্যরকম। চারদিকে সবুজের ছড়াছড়ি, যেন চোখজুড়ানো ভালো লাগা। চিম্বুক-নীলগিরি সড়কে রাস্তার দু’পাশে পাহাড়িদের মাচাং দোকানের টাটকা ফলমূল খাওয়ার মজাই আলাদা। তবে পর্যটন স্পটগুলোয় ভ্রমণের ট্যুরিস্ট গাড়িগুলোর ভাড়াটা একটু বেশিই বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পর্যটকদের অভিযোগ, চালকরা একাধিক ট্রিপ ধরার স্বার্থে পর্যটকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোরের আলো ছড়ানোর আগেই রওনা হন নীলগিরিতে। তাড়াহুড়া করে সকাল ১১টার আগেই আবার শহরে নামিয়ে দেন। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পর্যটকরাও। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও ভ্রমণের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেড়াতে আসা মানুষগুলো। বিষয়গুলোর দিকে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর দেওয়ার দাবি জানান তারা।

আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির বান্দরবানের জেলা সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত এ অঞ্চলের অর্থনীতিও। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে পর্যটন স্পট এবং আবাসিক হোটেল ও রেস্টুুরেন্ট। শীতের আগমনে দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরাও। পর্যটকদের আনাগোনায় চাঙা হচ্ছে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য। এখন বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও হস্তশিল্প ব্যবসায়ী এসানু মারমা বলেন, ‘পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর তৈরি কোমর তাঁতের পোশাক (কাপড়) এবং বাঁশ-কাঠের তৈরি হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রধান ক্রেতা হচ্ছেন পর্যটকরা। বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরাই এসব জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যান। শীতের আগমনে বেড়াতে আসছেন তারা। এতে বিক্রিও হচ্ছে হস্তশিল্পের জিনিসপত্রের।’ কোমর তাঁতে তৈরি গরম কাপড়ের পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি বলে জানান তিনি।

ট্যুরিস্ট জীপগাড়ি শ্রমিক সমিতির নেতা মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘পর্যটকবাহী দুই শতাধিক গাড়ি রয়েছে বান্দরবান সদরে। গাড়িগুলোর সঙ্গে জড়িত কয়েক শতাধিক শ্রমিক ও মালিক। শীতে পর্যটকরা বেড়াতে আসায় হাসি ফুটেছে শ্রমিকদের মুখেও। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং পর্যটক হয়রানির কোনো ধরনের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও শীতে পর্যটকের আগমন বেড়েছে দর্শনীয় স্থানগুলোয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই এ অঞ্চলে। পর্যটকদের সুবিধার্থে দর্শনীয় স্থানগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও চলমান রয়েছে জেলায়।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০