Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:55 pm

বান্দরবানে যোগাযোগ খাতে ২৭শ কোটি টাকার উন্নয়ন

আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান : বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় ১৫ বছরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ এবং অবকাঠামো খাতে ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যা পর্যটনশিল্পের বিকাশ এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) অর্থায়ন তত্ত্বাবধানে ২৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন সড়ক যোগাযোগ, সেতু নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড জেলার সাতটি উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণসহ এক হাজার ৯৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে বান্দরবান সদর উপজেলায় ৯৮৭টি, রোয়াংছড়ি ১৫০, রুমা ১৪৯, থানচি ১৫৮, লামা ২৭৭, আলীকদম ১২৪ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১৪৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৩৮৬ কোটি ৯০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ও লামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাশ বলেন, পাহাড়ের প্রত্যন্তঅঞ্চলে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ও গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি খাতে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে আগামী ৩০ বছরের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে জেলায়। সব খাতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এ জেলায়। গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়ন করেছেন।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল জানায়, বিগত ১৫ বছরে বান্দরবানের সাত উপজেলায় গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ কর্মসূচি, তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়), বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প, দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প, গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্প, উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, সারা দেশে পুকুর ও খাল উন্নয়ন প্রকল্প, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প-৩, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্প, টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, সর্বজনীন সামাজিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-২, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, পল্লি কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি-৩, পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লি উন্নয়ন প্রকল্প-২য় পর্যায় (রুরাল রোডস কম্পোনেন্ট), পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প পার্বত্য চট্টগ্রাম-২য় পর্যায়, সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ইউনিয়ন পর্যায় কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপন ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ পাইলট প্রকল্প, মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্প, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্প, নিবন্ধনকৃত মহিলা সমবায় সমিতির আওতায় ব্যতিক্রমী ব্যবসায়ী উদ্যোগ জয়ীতা বান্দরবান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প-২, অসচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্প, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রামীণ সড়ক ও হাটবাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পিটিআইবিহীন ১২টি জেলায় পিটিআই স্থাপন প্রকল্প, পিইডিপি-৩ (আসবাবপত্র সরবরাহ), রাবার ড্যাম প্রকল্প এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক ২৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে দৃশ্যমান নানা উন্নয়ন সম্পাদিত হয়েছে। বিশেষ করে সাঙ্গু নদীর ওপর ২২০ মিটার ব্রিজ, নাইক্ষ্যংছড়ি বাঁকখালী নদীর ওপর ৯৬ মিটার ব্রিজ, ফাসিয়াখালী ব্রিজ, বেঙছড়ি-বিলাইছড়ি ১৭ কিলোমিটার সড়ক, ঈদগড় বাইশারী-দোছড়ি ২৮ কিলোমিটার সড়ক, তুমব্রু ৩৩ কিলোমিটার সড়ক, আলীকদম-দোছড়ি ১১ কিলোমিটার সড়ক, রুমা মুননম পাড়ায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক, হলুদিয়া-ভাগ্যকুল ২৭ কিলোমিটার সড়কসহ দৃশ্যমান বহুপ্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন সফর করতে আগে তিন-চার দিন সময় লাগত। কিন্তু গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বর্তমানে এক দিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব। এই উন্নয়নের মূল কারিগর হলো ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবিন ইয়াছির আরাফাত জানান, স্থানীয়দের চাহিদার ভিত্তিতেই জেলায় সড়ক যোগাযোগ, সেতু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামোগহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নেও নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সোলার প্যানেল বিতরণের মাধ্যমে দুর্গম জনপদে পাহাড়ি পল্লিগুলো আলোকিত করা হয়েছে।

বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তৃণমূলের মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দিকনির্দেশনায় বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছে বান্দরবান জেলায়। গৃহীত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বান্দরবান জেলায় গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের আমূল পরিবর্তন এসেছে, যার সুফল ভোগ করছে পাহাড়ের মানুষ।