বান্দরবান ও চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়ার প্রকোপ

শেয়ার বিজ ডেস্ক বান্দরবান ও চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আছিয়া খাতুন (৮০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বান্দরবান: বান্দরবানের আলীকদমে বেড়েছে ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। গত দুই সপ্তাহে এ রোগে অন্তত ৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল সোমবার উপজেলার ৪ নম্বর কুরুকপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাত প্রু ম্রো এ তথ্য জানান। তিনি জানান, কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েক সপ্তাহে অন্তত ৩৫ জন ম্যালেরিয়া ও ২০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া ২০ দিন আগে ডায়রিয়ায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত শিশুটির পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষায় জেলার দুর্গম এলাকায় সুপেয় জলের সংকটের পাশাপাশি বাড়ে ম্যালেরিয়ার উপদ্রব। পাহাড় ধুয়ে ঝিরি বয়ে আসা রোগজীবাণুযুক্ত পানি পান করে বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ে। বৃষ্টির পানিতে পাহাড় স্যাঁতসেঁতে থাকায় ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী আনোফেলিশ মশার উপদ্রবও বেড়ে যায়। ফলে এ দুই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
এর আগেও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বর্ষা শুরু হতেই এ এলাকায় বেড়েছে ডায়রিয়া ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ।

আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে উপজেলার ৪০ হাজার ৯৫৮ জনকে পরীক্ষা করে দুই হাজার ৩৩৫ জনের শরীরে ম্যালেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছিল। চলতি বছরের মে পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬৫৪ জনের ওপর পরীক্ষা করে ২২৩ জনের শরীরে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মাহাবুব জানান, কয়েক সপ্তাহে কুরুকপাতা এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত সপ্তাহে একটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছিল। সেখানে কয়েকটি পাড়ার ৪৫ জনকে পরীক্ষার পর ২৭ জনের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু শনাক্ত করা হয়েছে।

তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আজও একটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। রোগীর চাপ রয়েছে বহির্বিভাগেও। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ডায়রিয়ায় আক্রাক্ত হয়ে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আছিয়া খাতুন (৮০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আছিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা শহরের বাগানপাড়ার মৃত আশরাফ আলীর স্ত্রী।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাজমুস শাকিব আছিয়া খাতুনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রোববার সকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আছিয়া খাতুন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দুপুরে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত সাত দিনে অর্থাৎ ১৭ জুন থেকে ২৩ জুন বিকাল ৩টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ মোট ১৭৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন ডায়রিয়া ও আবহাওয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন।

আসমা নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ঈদের পর থেকে পেটের পীড়ায় ভুগছেন আমার দাদি। গত পরশুদিন থেকে প্রচণ্ড পেটে ব্যথা শুরু হয়। এরপর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে ভর্তি করেছেন।

সজীব নামের এক রোগী বলেন, ঈদের পরদিন থেকে বমি ও অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা শুরু হয়েছে। দুদিন আগে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও চটপটি খেয়েছিলাম। খাওয়ার পরই আরও বেশি সমস্যা অনুভব করি। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে কমেনি। এরপর সকাল থেকে হঠাৎ শুরু হয় ডায়রিয়া। তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নারীর মৃত্যুর খবর আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। ঈদের মধ্যে মাংস অনেক বেশি খাওয়া এবং বাইরে ঘুরতে গিয়ে ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি ফাস্ট ফুড আইটেম বেশি খাওয়ার কারণে এবং তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ডায়রিয়া হলে প্রচুর স্যালাইন পানি পানসহ সতর্ক থাকতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০