নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে বাফেদা-এবিবির যে মডেলে ডলারের দর নির্ধারিত হচ্ছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আর্থিক সংকট নিরসনে ডলারের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা খুবই জরুরি। কিন্তু এবিবি ও বাফেদা দাম বেঁধে দেয়ার কারণে দামে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তাই ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা না গেলেও ধাপে ধাপে সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে। তা-না হলে সংকট আরও গভীর হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন ড. জাহিদ হোসেন। দেশের অর্থনীতির চলমান সংকট সমাধানে অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে শুরু করেছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যান এই অর্থনীতিবিদ। সেখানে তিনি এই পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে।
সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বৈঠকে ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনীতির নানা সূচক, নীতি উদ্যোগ ও তার প্রভাব নিয়ে একটি উপস্থাপনা দেন প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
সভা শেষে জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার, ডলার মার্কেটে অস্থিরতা এবং ব্যাংক খাতের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদÑএই তিনটি বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। সেগুলো ঠিকই আছে। আমিও মনে করি এই তিনটি বিষয় নিয়েই এখন কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ঋণের সুদহার আরও কিছুটা নমনীয় করতে হবে। প্রথমত, মানি মার্কেটের জন্য যে সুদহার করিডোর করা হয়েছে, সেটার উৎকর্ষতা আরও বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্মার্ট রেট যে একটা পদ্ধতি আছে, সেটা যাতে বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে এবং সেটাকে আরও কিছুটা নমনীয় করা যায় কি না সেই বিষয়ে কিছু প্রস্তাব তাদের দেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতের মন্দ ঋণ কমানোর জন্য বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করছে সেটা যেন বজায় থাকে। তিনি বর্তমানে এই বিষয়ক যেসব আইন করা হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন। যদিও এটাকেই অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি।
রিজার্ভ সংকট কাটাতে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি বকেয়া রপ্তানি আয় দ্রুত দেশে ফেরত নিয়ে আসা এবং ইনফরমাল চ্যানেলে যে রেমিট্যান্স আসছে সেটাকে কীভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে নেয়া যায় সেই বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংককে কাজ করতে হবে। আর এজন্য অবশ্যই ডলারের দরকে বাজারভিত্তিক করতে হবে।
বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন নীতি ব্যাখ্যা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. জাহিদ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। এছাড়া তিনি ঋণ সুদহার ক্রমান্বয়ে বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয়েরও পরামর্শ দেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণপূর্বক তা সংরক্ষণের নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহারে একক বিনিময় হার, অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিতকরণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় সাশ্রয়ের উল্লেখপূর্বক ভবিষ্যতে সময়োপযোগী নীতি উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি তাকে অবহিত করা হয়।
এর আগে গত সোমবার গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে সংস্থাটি জানায়, ডলার সংকট নিরসনে সম্প্রতি নেয়া রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দীর্ঘ মেয়াদি সুফল আনবে না। ডলার রেট পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছিলেন, আমরা জানিয়েছি দেশের অর্থনীতি এখন একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এখন যদি সঠিক পদক্ষেপ বা নীতি গ্রহণ করা না হয় তাহলে আগামীতে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে।