Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:36 pm

বাবুরহাটে ৪৫ কাপড়ের দোকান ভস্মীভূত

প্রতিনিধি, নরসিংদী: দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর বাবুরহাটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ৪৫টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। পুড়ে গেছে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস ও থানকাপড়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, আগুনে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাবুরহাটের একটি শাড়ির দোকান থেকে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট প্রায় ৪০ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, দেশের বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাটে মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ ছিল। স্থানীয়রা বিকালে আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪টায় বাজারের মধ্যে শাড়ির দোকানে আগুন দেখতে পান তারা। পরে তারা খবর দিলে মাধবদী বাজার ফায়ার স্টেশন ঘটনাস্থলে আসে। দোকানগুলোয় শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস থাকায় দ্রুত আগুন একে একে পাশের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাজারের একটি শেডের প্রায় ৪৫টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এদিকে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা বাজারে আসতে শুরু করেন। তারা নিজ দোকানের সামনে ভিড় করতে থাকেন। বাজারে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান খাজা ট্রেডার্সের মালিক জুয়েল খান বলেন, ‘খবর পেয়ে এসে দেখি দোকানে আগুন জ্বলছে। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। সব ছাই হয়ে গেছে। অনেকেই দোকান পুড়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন।’

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) আবদুল হালিম বলেন, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাধবদী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে রাস্তা ও হাটের গলিগুলো সরু থাকায় কাজ করতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত শেষে বলা যাবে।’

গতকাল দুপুর ১২টায় বাবুরহাটে গিয়ে দেখা যায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন দোকানের মালিক ও আশপাশের ব্যবসায়ীরা। কোনো সাড়া শব্দ নেই। যেন মৃত্যুপুরি। এর মধ্যে কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া কাপড়গুলো ভ্যান গাড়িয়ে দিয়ে অন্যত্র সরাচ্ছেন। কেউ বা দোকানের ভেতরে গিয়ে অক্ষত কিছু রয়েছে কি না দেখছেন। কথা বলতে চাইলে তারা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, কী আর বলব, বলার কিছুই নেই, যা ছিল সবই তো গেছে, সঙ্গে আমাদের কপালটাও গেছে। সব সঞ্চয় দিয়ে গড়া এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দোকানের সব কাপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

কথা বলে একটু ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের স্তূপ থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে। পুড়ে যাওয়া কাপড়ের স্তূপ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে। কথা হয় গ্রামীণ প্রিন্ট শাড়ির দোকানের স্বত্বাধিকারী মো. নুরুল ইকরামের সঙ্গে। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। পুড়ে যাওয়া কাপড়ের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেলেন। এ সময় এগিয়ে আসেন রাসেল নামে মা-মণি প্রিন্ট শাড়ির স্বত্বাধিকারী। তিনি জানালেন, তার দোকানে দেশি-বিদেশীসহ প্রায় ৭০ লাখ টাকার পণ্য ছিল, যা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জাকির টেক্সটাইলের মালিক অরুন মিয়া জানান, আমার দোকানে অনেক বেডসিট ছিল। পাশাপাশি শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রিপিচ পাইকারি বিক্রি করা হয়। বিকাল ৪টার দিকে মার্কেটের পশ্চিম দিকের দোকান থেকে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়াতে থাকে। মুহূর্তে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে প্রায় ৪৫টি দোকান পুড়ে যাওয়ায় প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

মার্কেটের পার্শ্ববর্তী নূসরাত শাড়ি হাউসের স্বত্বাধিকারী নাজির হোসেন জানান, শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় শেখেরচর-বাবুরহাটে বেচাকেনা বন্ধ থাকে। বন্ধের সময় বাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকায় লোকজনও থাকেন কম। বিকালে আগুনের খবর পেয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা ছুটে আসেন। আগুনের ঘটনায় লুঙ্গি, শাড়ি, বিছানার চাদর, থ্রিপিচসহ বিভিন্ন কাপড়ের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মাহীন আলম জানান, বিকাল ৪টার দিকে শেখেরচর বাজারে আগুনের খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যাই। মাঝ রাস্তায় যাওয়ার পরই আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে উড়তে দেখে আশপাশের ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে ৯টি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট কাজ করে প্রায় এক ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বাজারের রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় পার্শ্ববর্তী ভবনের ছাদে উঠে পানি দিতে হয়েছে। আর কাপড়ের দোকান হওয়ায় তাতে পলিথিন থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীকালে ফায়ার সার্ভিসের আরও তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।