বিশেষ প্রতিনিধি: বেসরকারি খাতে বায়ু ও সৌরবিদ্যুতের আরও তিনটি কেন্দ্র অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। বিল্ড, ওন অ্যান্ড অপারেট (বিওও) পদ্ধতিতে এ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হবে। এর মধ্যে একটি বায়ু ও দুটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০ বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে। এ তিন কেন্দ্র থেকেই বিদ্যুৎ কেনা হবে ডলারে। যদিও দেশে বড় ধরনের ডলার সংকট রয়েছে। বর্তমানে ডলার সংকটে আদানিসহ বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল দিতে পারছে না সরকার।
এ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হবে না। ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ (এনইএনপি) তথা বিদ্যুৎ উৎপাদন নাই, মূল্যও নাই ভিত্তিতে কেন্দ্র তিনটির সঙ্গে চুক্তি করা হবে।
তথ্যমতে, কক্সবাজারের চকরিয়ায় বেসরকারি খাতে প্রস্তাবিত বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা ধরা হয়েছে ২২০ মেগাওয়াট। এটি স্থাপন করবে হংকংয়ের জেটি নিউ এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড। অন্যদিকে কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে ডিট্রোলিক এসএ ইন্টারন্যাশনাল পিটিই এবং পাওয়ারনেটিক এনার্জি লিমিটেড কনসোর্টিয়াম। আর কনসোর্টিয়াম অব গ্রিন প্রোগ্রেস রিনোয়েবল বি ভি অ্যান্ড আই আর বি অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে।
এ তিন কেন্দ্র থেকে ২০ বছরে বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হবে ডলারের বিদ্যমান বিনিময় হারে প্রায় ১৯ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। যদিও বাস্তবে কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হবে আরও বেশি। কারণ আগামী ২০ বছরে ডলারের বিনিময় হার কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কেউই ধারণা করতে পারছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য আজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্যারিফ নির্ধারণের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপিত হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের চকরিয়ায় বেসরকারি খাতে বায়ুভিত্তিক ২২০ মেগাওয়াট স্থাপন করছে হংকংয়ের জেটি নিউ এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড। প্রাথমিকভাবে ২০০ মেগাওয়াট ও ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল কোম্পানিটি। পরে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে তা ২২০ মেগাওয়াটে উন্নীত ও ২০ বছরের জন্য চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে। এ সময় প্রস্তাবিত ট্যারিফও কমিয়ে আনা হয়। এ কেন্দ্রটি বিদ্যুতের ট্যারিফ ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ২৫ সেন্ট বা ১৩ দশমিক ৪১৪ টাকা (১ ডলার = ১০৯.৫০ টাকা)। এতে আগামী ২০ বছরে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের খরচ ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। তবে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল প্রদানের সময় ওই সময়ের সোনালী ব্যাংকের ডলারের বিনিময় মূল্য ধরা হবে।
এদিকে কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনেও ২৫ বছরের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছিল ডিট্রোলিক এসএ ইন্টারন্যাশনাল পিটিই এবং পাওয়ারনেটিক এনার্জি লিমিটেড কনসোর্টিয়াম। পরে তা নেগোসিয়েশন করে ২০ বছর নির্ধারণ করা হয়। এ সময় ট্যারিফও কিছুটা কমানো হয়। এতে ২০ বছর কেন্দ্রটি থেকে সৌরবিদ্যুৎ কিনতে সরকারের খরচ হবে তিন হাজার ৫৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা সৌরবিদ্যুৎ কেনায় খরচ ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৯৮ সেন্ট বা ১০ দশমিক ৯২৮ টাকা। এ ক্ষেত্রেও ডলারের বিনিময় মূল্য ১০৯.৫০ টাকা ধরা হয়েছে। তবে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল প্রদানের সময় ওই সময়ের সোনালী ব্যাংকের ডলারের বিনিময় মূল্য ধরা হবে।
অন্যদিকে কনসোর্টিয়াম অব গ্রিন প্রোগ্রেস রিনোয়েবল বি ভি অ্যান্ড আই আর বি অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ২০ বছরের জন্যই প্রস্তাব দেয়। তবে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম কিছুটা কমিয়ে আনা হয়। এতে প্রতি কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হবে ৯ দশমিক ৯৮ সেন্ট বা ১০ দশমিক ৮৭৮২ টাকা। এতে ২০ বছরে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রেও ডলারের বিনিময় মূল্য ১০৯.৫০ টাকা ধরা হয়েছে। তবে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল প্রদানের সময় ওই সময়ের সোনালী ব্যাংকের ডলারের বিনিময় মূল্য ধরা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় আদানিসহ বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল দিতে পারছে না সরকার। এরই মধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভারতের বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি। এরপরও ডলারে এ ধরনের চুক্তি ভবিষ্যতে আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে।