Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:19 pm

বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে দেড় লাখ টন

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বসুন্ধরা পেপার মিলসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। এছাড়া এখানে প্রতিদিনই অনিয়মিত শ্রমিকরা কাজ করছেন। শুধু ইউনিট-৩তেই প্রতিদিন কাজ করছেন এই ধরনের ৬০০ শ্রমিক। ইউনিট-১ এবং ইউনট-২তেও এই ধরনের শ্রমিক রয়েছে। সব মিলে প্রতিদিন এখানে কাজ করছেন চার হাজারের বেশি লোক।
এই প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশে খুশি এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনক্ষমতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ টনে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কর্মীবান্ধব। এখান থেকে তারা স্বাস্থ্যসেবা, ছুটি, ওভার টাইমসহ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানে কখনও একজন শ্রমিককে আট ঘণ্টার বেশি কাজ করানো হয় না। অতিরিক্ত কাজ করলে তা ওভারটাইম হিসেবে গণ্য হয়। শ্রমিকদের নামে বিমা থাকার পাশাপাশি কেউ অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার দায়িত্বও প্রতিষ্ঠানটির।
বসুন্ধরা পেপার মিলস ইউনিট-৩-এর হেড অব প্রজেক্ট প্রকৌশলী মো. আবুল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, এখানকার কর্মপরিবেশে আমরা খুশি। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের এখান থেকে কেউ ঠকে না। আমরা সবসময় কর্মীবান্ধব থাকার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উৎপাদন ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু এর কোনো প্রভাব আমরা কর্মীদের ওপর পড়তে দিইনি। আমরা অন্যভাবে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছি। যেমন জেনারেটরের তাপ কাজে লাগিয়ে বাষ্প তৈরি করা, যন্ত্রপাতি যথাযথ মেইনটেন্যান্সের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোসহ কারখানায় ব্যবহৃত পানি পরিশোধনের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছি। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রধানত টিস্যু ও কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৫০ টনে। নতুন মেশিন ব্যবহারের আগে বসুন্ধরা সব ইউনিটের উৎপাদনক্ষমতা ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৫০ টন।
সাম্প্রতিক সময়ে টিস্যু ও কাগজের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে পেপার মিলটি নারায়ণগঞ্জে ১০৭ কোটি টাকা দিয়ে অস্ট্রিয়া বেইজড এন্ড্রিজ মেশিনের নতুন ইউনিট চালু করে। বিশ্বব্যাপী এই মেশিনটির বিভিন্ন ধরনের টিস্যু ও কাগজ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটি বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে পণ্যের বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে।
তথ্যমতে, দেশের কাগজশিল্পে ৪০টির মতো বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যেও শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। বর্তমানে তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে বিড়ি পেপার ও বুক প্রিন্টিং, বাল্ক পেপার, টিস্যু পেপার ও হেলথ অ্যান্ড হাইজিন ক্যাটেগরিতে ৫২ ধরনের পণ্য উৎপাদন করছে তারা। পাশাপাশি আরও বেশি কিছু নতুন পণ্য বাজারে আনার প্রক্রিয়া চলছে।
নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটে বসুন্ধরা পেপার মিলসের ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ অবস্থিত। ১৯৯৩ সালে স্থাপিত ইউনিট-১-এ বিভিন্ন গ্রেডের হোয়াইট ও প্রিন্টিং পেপার, কার্বনলেস পেপার, অফসেট পেপার, র‌্যাপিং পেপার, এ-৪ পেপার, কালার লেজার পেপার, স্টিকার পেপার, সিগারেটের কাগজ, ওজিআর পেপার, এক্সারসাইজ বুক ও কাগজের ব্যাগ তৈরি হয়। তাছাড়া এখানে গ্লাসিন পেপার, পিপি ওভেন ব্যাগ, এমজি পেপার, কোটেড ও আনকোটেড বোর্ডসহ টিস্যু তৈরি করা হয়।
অন্যদিকে ১৯৯৪ সালে স্থাপিত ইউনিট-২-এ মূলত নিউজপ্রিন্ট, প্রিন্টিং পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড, লিনার পেপার ক্রাফট পেপার, আর্ট কার্ড ও আর্ট পেপার তৈরি করা হয়। এ ইউনিটে দুটি ডি-ইনকিং প্লান্ট রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবহার্য ও পরিত্যক্ত কাগজ থেকে পাল্প তৈরি করে নতুন কাগজ উৎপাদন করা হয়। ডি-ইনকিং প্লান্টের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১২০ টন।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার আনারপুরে অবস্থিত বসুন্ধরা পেপার মিলসের ইউনিট-৩। এটি দেশের প্রথম বেসিক টিস্যু তৈরির কারখানা। পাঁচটি প্রডাকশন লাইনের মাধ্যমে এ ইউনিটে বিভিন্ন ধরনের টিস্যু, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বেবি ডায়াপার, ডায়াপ্যান্ট, হ্যান্ডগ্লাভস, কটন বাড, ড্রিংকিং স্ট্র, টুথপিক, কাগজের কার্টন, এমজি পোস্টার পেপার, লেজার প্রিন্টিং পেপার, কালার প্রিন্টিং পেপার, লিনার পেপার, ম্যানিফোল্ড পেপার ও প্লাগ-র‌্যাপ পেপার তৈরি হয়।
বর্তমানে বসুন্ধরা পেপার মিলসের তিনটি ইউনিট মিলিয়ে বার্ষিক এক লাখ ৪৩ হাজার ৫০ টন টিস্যু ও পেপার, ৩৪ হাজার ৩০৮ টন পেপার, এক কোটি ৮৯ পিস প্রিন্টিং, ১২ কোটি পিস পিপি ওভেন ব্যাগ ও স্যাক ব্যাগ, এক কোটি প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন, পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ পিস বেবি ডায়াপার, আট কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার পিস ডায়াপ্যান্ট, এক হাজার ৬৬৭ টন সø্যাজ বোর্ড ও আড়াই কোটি পিস হ্যান্ডগ্লাভস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
১৯৯৩ সালে কোম্পানিটির যাত্রা শুরু হয়েছে। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০১৮ সালে। ৮০ টাকা কাট অফ প্রাইসে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ১৭৩ কোটি টাকা।