Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:22 pm

বালিভর্তি ট্রাকের অবাধ চলাচলে বেহাল বেলগাছি সড়ক

খন্দকার রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী: সড়ক নয় যেন মাছ চাষবাদের ছোট জলাশয়। ব্যঙ্গ করে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছি গান্ধীমারা-আঞ্চলিক সড়ককে এভাবে অভিহিত করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বেলগাছি পুরোনো বাজার, খানগঞ্জ, ঘোষবাড়ী, চরাঞ্চল, হাটবাড়ীয়া বোয়ালমারী, ঘু-ঘু শাইল, ওরিপুর, মহেন্দ্রপুর, হরিহরপুর, সুইসগেট, কাজিরহাটসহ ১৩টি গ্রাম মূল বেলগাছি বাজারসহ রাজবাড়ী শহর থেকে এ সড়কের কারণে যোগাযোগের বদলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ সব অঞ্চলের কোনো মানুষ যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, বিশেষ করে কোনো গর্ভবতী মা বা হার্টঅ্যাটাকের রোগীকে রাজবাড়ী হাসপাতালে নেয়ার সুযোগ নেই।

ভারী বৃষ্টির কারণে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাস্তার অসংখ্য ছোটবড় গর্ত, জলাবদ্ধতা ও কাদার কারণে হেঁটে চলা পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় এ সব এলাকায় যদি কোনো অপরাধামূলক কর্মকাণ্ড বা অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে সদর থানার পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

আঞ্চলিক এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত ভ্যানসহ ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করত। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এ ছোট সড়কটি দিয়ে বালিবাহী ১০ চাকার ট্রাক অবাধে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। এ কারণে রাস্তায় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ছোট খাটো যানবাহনের চালক ও এলাকাবাসী।

বালিবাহী ট্রাকের বালির কারণে পথচারীদের চোখমুখসহ পুরো দেহ সাদা হয়ে যায়। এ রাস্তায় বড় ট্রাক চলাচলের কারণে যেমন রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে তেমনি ক্ষতি হচ্ছে ভ্যানচালকদের। এই এলাকায় বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষ নি¤œআয়ের। অনেকেই ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বড় এই ট্রাকের পাশ দিয়ে সেগুলো যাত্রী নিয়ে যেতে পারে না। কোনো মতো চলাচল করলেও দুর্ঘটনা ঘটে প্রায়ই।

বেলগাছি বাজারের এক ব্যবসায়ী আকরাম শেখ অভিযোগ করে বলেন, এ রাস্তায় ১০ চাকার ট্রাক অবাধে চলাচল করে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। আর আমরা এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারি না। কাপড় চোপড় সব ধুলায় নষ্ট হয়ে যায়।

আজাদ হোসেনসহ একাধিক স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিগত কয়েকবছর ধরে জৌকুড়া টু বাগমারা রাস্তাটি বেহাল ও বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিন শত শত বালির ট্রাক বেলগাছির ওপর দিয়ে চলাচল করে। যেখানে ৫-১০ টনের ট্রাক যাওয়াই উচিত নয়, সেখানে ১০ চাকার ভারী ট্রাক ৫০ থেকে ৬০ টন বালি বহন করে রাস্তাটি ব্যবহার করছে। ফলে আজকে এই দশা। বেলগাছী বাজারে ট্রাকের কারণে প্রতিনিয়ত জ্যাম লেগেই থাকে, এতে ভোগান্তিতে পড়েন দোকানদার ও পথচারীরা। বৃষ্টির কাদা আর রোদে ধুলাবালি তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

এ বিষয়ে খানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকরাম হোসেন জানান, ১০ চাকার বড় ট্রাকের কারণে বাজারে জ্যাম লেগেই থাকে। আর দোকানদারসহ পথচারীরা খুবই বিপাকে আছেন। এলাকায় আগুন লাগলে বা কেউ অসুস্থ হলে ট্রাকের কারণে জরুরি সেবা পাওয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে প্রশাসন ও অন্য জনপ্রতিনিধিদের বলেছি কোনো লাভ হয়নি। অনেক ভ্যানচালক অভিযোগ করে বলেন, বড় ট্রাকের কারণে আমাদের চলাচলে খুবই কষ্ট হয়। চাপা রাস্তায় বড় ট্রাক ঢুকলে ভ্যান নিয়ে আমাদের চলাচল খুবই কষ্টের হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

খানগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাহার হোসেন তকদির জানান, রাস্তাটির বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করে রাস্তাটি মেরামত করাতে ব্যর্থ হয়েছি।

তিনি বলেন, বালি খনিজসম্পদ, দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে অপরিহার্য। জৌকুড়া/ধাওয়া পাড়া বালির খনি এই রাস্তা ব্যবহার করুক, কিন্তু সময়মতো রাস্তাটি মেরামত করার ব্যবস্থা করা হোক। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালি সরবরাহ হলেও রাস্তাটি সংস্কার করার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কোটি টাকা উপার্জন করলেও ব্যবসায়ীরা এক ট্রাক বালি বা খোয়া রাস্তায় ফেলেননি। এ কারণে রাস্তাটি চলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রায় সপ্তাহ ধরে বালির ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রয়েছে।

তিনি রাজনৈতিক নেতাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সড়কের বেহালদশা স্বীকার করে রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর ডিও লেটার-সংবলিত প্রকল্প জমা দিচ্ছেন। ওই প্রকল্প অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান শেষে কাজ শুরু করা হবে।