মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ঊনবিংশ শতকে নির্মিত একটি প্রাসাদ। রাজধানী থেকে ৩৫ মাইল উত্তর পশ্চিমে এর অবস্থান। মানিকগঞ্জ শহর থেকে ৫ মাইল পূর্বে সাটুরিয়ায় এই জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এই প্রত্নতাক্তিক নিদর্শনটি ২০০ বছরের পুরোনো।
জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন গোবিন্দ রাম সাহা। তিনি মহাজন ও ব্যবসায়ী ছিলেন। জমিদার বাড়িটিতে অনেকগুলো স্থাপনা রয়েছে। ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গকিলোমিটার জমির উপরে রয়েছে ৭টি দালান। দালানগুলো এক সঙ্গে নির্মিত হয়নি। পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকার সূত্রে বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা হয়েছে এগুলো।
গোবিন্দ রাম সাহা বিয়ে করেন বালিয়াটিতে। তার ছিল চার ছেলেÑআনন্দ রাম, দধিরাম, পণ্ডিত রাম ও গোপাল রাম। এ চার ভাইয়ের পৃথক ব্যবসা ছিল। সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, নলছিটি প্রভৃতি স্থানে লবণ, সুপারি, চাল প্রভৃতি ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হন তারা। বসবাসের জন্য নিজেদের শৌখিনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ইমারত গড়তে শুরু করেন। এই চার ভাই-ই বালিয়াটি প্রাসাদ, গোলাবাড়ি, পূর্ববাড়ি, পশ্চিমবাড়ি ও উত্তরবাড়ি নামে পাঁচটি জমিদার বাড়ি তৈরি করেন। প্রত্যেক বাড়ির রয়েছে আলাদা নামকরণের বৈশিষ্ট্য।
বালিয়াটি প্রাসাদ
স্থাপত্যশিল্পীর নিদর্শন এটি। সুবিশাল
প্রাসাদটি পাঁচটি স্বতন্ত্র ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত। এর পূর্বদিকে একটি ব্লক ছাড়া চারটি ব্লকের দুটিতে একটি দ্বিতল ভবন ও একটি বারান্দা বিশিষ্ট তিনতলা ভবন রয়েছে। উত্তরদিকের ভবনটি কাঠের কারুকার্যে তৈরি। প্রতিটিতে অর্ধ-বৃত্তাকার খিলান আকৃতির সিংহ খোদাই করা তোরণ বিদ্যমান।
গোলাবাড়ি
বাড়িটির ঐতিহ্য শুরু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। গোলাবাড়িটিতে লবণের একটি বিশাল গোলা ছিল বলে ধারণা করা হয়। জমিদাররা
ধর্মপ্রাণ হওয়ায় বাড়ির মন্দিরে পূজা করা হতো। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এখানে লুটপাট করা হয়।
পশ্চিমবাড়ি
পশ্চিম অংশে অবস্থান বলে বাড়িটির নাম পশ্চিম বাড়ি। দধিরাম ছিলেন পশ্চিম বাড়ির জমিদারদের পূর্বপুরুষ।
পূর্ববাড়ি
পূর্ব অংশে অবস্থান বলেই নামকরণ করা হয় পূর্ববাড়ি। এ বাড়ির জমিদার পুরুষ রায় চান। তিনি দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সন্তাদের সম্পত্তির ১০ আনা ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তাদের ছয় আনা দান করেন। ১০ আনির জমিদার বাড়িটি বর্তমানে পর্যটনকেন্দ্র। এখানে পশ্চিম থেকে পূব পর্যন্ত চারটি বিশাল দালান রয়েছে। এগুলো বড় তরফ, মেঝো তরফ, নয়া তরফ, ছোট তরফ নামে পরিচিত।
দৃষ্টিনন্দন ইমারাত, নির্মাণ কৌশল আর অলঙ্করণে অপূর্ব জমিদার বাড়িটি। প্রবেশ করলে চোখে পড়ে বিশাল আঙিনা। একই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে চারটি বহুতল ভবন। রয়েছে কয়েকটি পুকুর। পুকুরগুলোর চারপাশ শান বাঁধানো নান্দনিক ঘাট। ভেতরে রঙ মহল নামে খ্যাত কক্ষটিকে জাদুঘর করা হয়েছে। প্রাসাদে ২০০টি কক্ষ রয়েছে। সব কক্ষে প্রাচীন শিল্পের সুনিপুণ কারুকাজ চোখে পড়ে। প্রবেশ দরজার দুই পাশে সিংহের পাথরের মূর্তি। রয়েছে একটি ফুলের বাগান। বাড়ির প্রতিটি দেওয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু। চুন, সুরকি ও শক্তিশালী কাদামাটি দিয়ে তৈরি দেওয়াল। লোহার রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার পাত। ভেতরে রয়েছে লোহার সিঁড়ি। ধারণা করা হয় সামনের চারটি প্রাসাদ ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা হতো।
কোথায় থাকবেন
মানিকগঞ্জে থাকার জন্য হোটেল ও গেস্টহাউজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানিকগঞ্জ রেসিডেনসিয়াল বোর্ডিং। ঠিকানা-২০৮, শহীদ রফিক সড়ক, মানিকগঞ্জ। এখানে ১৬টি সিঙ্গেল ও ১০টি ডাবল কক্ষ রয়েছে। নবীন রেসিডেনসিয়াল বোর্ডিংটি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পাশে নবীন সিনেমা হলের কাছে। এখানে
১৫টি সিঙ্গেল ও ৭টি ডাবল কক্ষ রয়েছে।
রয়েছে সরকারি জেলা পরিষদ বোর্ড হাউজ। ঠিকানা-শহীদ মিরাজ তপন স্টেডিয়ামের পাশে।
সময়সূচি
রোববার পূর্ণদিবস ও সোমবার অর্ধদিবস
বন্ধ। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
খাবার সুবিধা
খাবারদাবারের জন্য বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ও হোটেল রয়েছে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী ও গুলিস্তান থেকে বেশকিছু বাস বিশেষ করে বিআরটিসি বাস সার্ভিস, শুভযাত্রা বাস সার্ভিস, পদ্মালাইন, জনসেবা বা এসবি লিংক গেটলক পরিবহন প্রভৃতি মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। দুই ঘণ্টায় সাটুরিয়া যাওয়া যায়। সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি।
শিপন আহমেদ