বাল্যবিয়ে পিরোজপুরে বেশি সবচেয়ে কম নেত্রকোনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও কারণ জানতে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি ২৭টি জেলার প্রায় ৫০ হাজার খানায় জরিপ চালিয়েছে। জরিপের তথ্য বলছে, এসব জেলায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পিরোজপুর। সেখানে বাল্যবিয়ের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে কম নেত্রকোনা জেলায়। এখানকার হার ২৪ দশমিক ১ শতাংশ।

বাংলাদেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে বাল্যবিয়ের চর্চা থাকার উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে ব্র্যাকের সাম্প্রতিক এ গবেষণায়। গত ৫ বছরে এসব পরিবারের যেসব মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা পুত্রবধূ হিসেবে যারা এসেছে, তাদের ৬০ শতাংশেরও বেশি মেয়ের বয়স বিয়ের সময় ১৮ বছরের নিচে ছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘চাইল্ড ম্যারেজ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির (সেলপ) প্রধান শাশ্বতী বিপ্লব ‘বর্ন টু বি অ্যা ব্রাইড, চাইল্ড ম্যারেজ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপারসন বেগম মেহের আফরোজ চুমকি।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। পিরোজপুরের পর বাল্যবিয়ের শীর্ষে থাকা জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছেÑচাঁপাইনবাবগঞ্জ (৬৫ দশমিক ২ শতাংশ), নওগাঁ (৬৫ শতাংশ), ঠাকুরগাঁও (৬২ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জয়পুরহাট (৬১ দশমিক ৪ শতাংশ)।

‘৫৬ শতাংশ বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের মাধ্যমিক পাস করার আগেই বিয়ে হয়েছে। যোগ্য পাত্র পাওয়ার কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ অভিভাবক। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে বাকিদের মধ্যে ১৮ শতাংশ দারিদ্র্য, যৌতুক কম বা না চাওয়ার কারণে ১০ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কথা বলছেন ৭ শতাংশ, পড়ালেখায় ভালো না হওয়ার কারণে ৬ শতাংশ এবং অন্য কারণের কথা বলেছেন ১৫ শতাংশ।’

গবেষণাটিতে নন-প্রবাবিলিটি পারপাসিভ স্যাম্পলিং পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের বেছে নেয়া হয়েছে। আধা-কাঠামোগত (সেমি-স্ট্রাকচার্ড) সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাল্যবিয়ে সম্পর্কে তাদের ধারণাগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, কিশোরীদের বিয়ে করছে এমন পুরুষরা সমাজের ‘ভাইরাস’। তাদের পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে তাদের সামাজিকভাবে লজ্জায় ফেলতে হবে। শুধু কিশোরী বা তাদের অভিভাবদের নয়, যে ছেলেরা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে করতে চায়, তাদের সচেতন করা জরুরি। ছেলেরা কেন অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে করছে, সেটা নিয়েও গবেষণা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, যতদিন না মা-বাবা মেয়ের পরিচয়ে গর্বিতবোধ করার রুচি ও মানসিকতার পরিবর্তন করবেন, ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) প্রধান অন্তরায় বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ে নিয়ে গবেষণায় সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ বলেন, যখন বাল্যবিয়ের চাহিদা কমে আসবে, শুধু তখনই এর (কিশোরী বধূর) জোগানটা কমে আসবে। প্রয়োজনের তুলনায় বাল্যবিয়ে বন্ধের উদ্যোগ অপ্রতুল। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হবে বাল্যবিয়ের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করা এবং প্রতিহত করা। তৃণমূল পর্যায়ে কিশোরীদের আত্মবিশ্বাস ও জীবনদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে দাতাগোষ্ঠী, জাতিসংঘ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচি (সেলপ) একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে থাকা কিশোরীদের নিয়ে গ্রামভিত্তিক ‘স্বপ্নসারথি’ দল গঠন করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০