Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:19 am

বাল্যবিয়ে রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি

বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে নারী শিক্ষায় অগ্রগতি অর্জনসহ নানা সামাজিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। আর নারী শিক্ষায় অগ্রগতি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সমাজের নানা মাপকাঠিতে দেশকে উচ্চ আসন দিয়েছে। কিন্তু এসব অর্জন যেন ম্লান করে দিচ্ছে বাল্যবিয়ে। এ বাল্যবিয়ে রোধ করা না গেলে জনসংখ্যা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে রাখা এবং মানব উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে যেতে পারে। তাই বাল্যবিয়ে রোধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘বাল্যবিয়ের কারণে বগুড়ায় কমেছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাল্যবিয়ের কারণে বগুড়ার স্কুলগুলোয় মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। বিশেষ করে কভিড-১৯ মহামারির কারণে দেড় বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। সে কারণে স্কুলে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপকহারে কমে গেছে। এভাবে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।

কেবল বগুড়া নয়, সারাদেশেই কভিডকালে স্কুলে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। গত কয়েক মাসে গণমাধ্যমে এ ধরনের বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে মেয়ে শিক্ষার্থীদের করোনাকালে বিয়ে হয়ে যাওয়ার নানা কারণ উঠে এসেছে। এমনকি করোনাকালে বন্ধ থাকার পর নতুন করে স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের বাচ্চসহ স্কুলে আসতে দেখা গেছে। করোনাকালে গ্রমাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বাবা-মা তড়িঘড়ি করে তাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এ ধরনের বাল্যবিয়ে সার্বিকভাবে জাতিগঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বৈকি।

দেশের জনস্বাস্থ্য খাতে এখনও যেসব সমস্যা বিদ্যমান, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মায়েদের পুষ্টিহীনতা। মূলত যেসব নারী কম বয়সে মা হন, তাদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা ও রক্তস্বল্পতার মতো সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাছাড়া অপরিণত বয়সে মা হওয়ার ফলে অনেকেই শিশুর সঠিক যত্ন নিতে পারে না, ফলে কোলের শিশুও নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়। কম বয়সে গর্ভধারণ অপুষ্ট শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার অন্যতম কারণ। এসব কারণে সার্বিকভাবে বাল্যবিয়ে মানবসম্পদ বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বৈকি।

এ কথা সত্য যে, করোনাকালে বাংলাদেশেই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। এমনকি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রাখার অনুমতি দেয়া হলেও বন্ধ রাখা হয় স্কুল-কলেজ। এতে করে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের সার্বিক শিক্ষা ক্ষেত্রে। এসব নেতিবাচক প্রভাবের একটি হচ্ছে বাল্যবিয়ের হার বেড়ে যাওয়া। সরকার এসব বিষয়ে সজাগ থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ভবিষ্যতে যাতে বাল্যবিয়ের হার বৃদ্ধি না পায়, সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ের নানা দপ্তরসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে যৌথভাবে প্রচারাভিযান পরিচালনা করে জনসচেতনতা সৃষ্টিমূলক কার্যক্রম জোরদার করা উচিত বলে মনে করি।