Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:27 am

বাল্যবিয়ে: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রতিবন্ধক

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন, যার মূল চাবিকাঠি হিসেবে ডিজিটাল সংযোগকে চিহ্নিত করা হলেও স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ নাগরিককে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের এই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পেছনে একটি বড় ধরনের বাধা হলো বাল্যবিয়ে।  জনসংখ্যা পরিস্থিতির নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে বাল্যবিয়ের হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চমে রয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে।  বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ও মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ  করতে পারলেও এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে, যেটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে ব্যাহত করতে পারে। 

বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে।  দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম বাল্যবিয়ে হয় মালদ্বীপে মাত্র দুই শতাংশ। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কায় ১০, পাকিস্তানে ১৮, ভারতে ২৩, ভুটানে ২৬, আফগানিস্তানে ২৮ ও নেপালে ৩৩ শতাংশ বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে। ইউএনএফপিএ’র মতে, বাল্যবিয়ে বাড়লে কম বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ে। প্রকৃতপক্ষে কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হলে তাদের মানসিক অপরিপক্বতার কারণে বিয়ে-পরবর্তী জীবন, গর্ভধারণ ও সন্তান পালন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে না। ফলে প্রসবকালীন জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। অপরদিকে অসুস্থ ও পুষ্টিহীন সন্তান জš§ নেয়। বাল্যবিয়ের মূল কারণ দারিদ্র্য, সামাজিক অসচেতনতা। মূলত দারিদ্রে?্যর কারণে অনেক পরিবার মেয়েদের বিয়ে দেয়াকে পরিবারের চাপ কমানোর শামিল মনে করে। বাংলাদেশে পিতৃতান্ত্রিক প্রথার কারণে নারীদের অবমূল্যায়ন করার কারণে এমনটি ঘটে। অনেকে আবার অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়াকে তাদের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষায় উপায় হিসেবে ভাবে। মূলত গ্রামপর্যায়ে এমন দৃশ্য বেশি দেখা যায়। অনেক পরিবারে বয়স্কদের চাপে পড়ে মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে মেয়েটি তাদের লক্ষ্য পূরণের পথ থেকে ছিটকে যায়। আমাদের দেশে কভিড মহামারির সময় বাল্যবিয়ের বিষয়টি বেশি ঘটেছে। এসময় অর্থনীতির বিপর্যয় এবং দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মেয়েশিশুদের বিয়ে দিয়ে পরিবারের চাপ কমানোর উপায় হিসেবে এটি করা হয়েছে। 

একটি দেশের উন্নয়নের পেছনে নারী-পুরুষ উভয়ের অবদান থাকে। আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের অন্যতম খাত হলো রেডিমেড গার্মেন্ট, এই সেক্টরটির বিকাশে মূলত নারীদের অবদান অনেক। আজ নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনলাইন-অফলাইন ব্যবসায়ের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে, কিন্তু এই নারীই আবার বাল্যবিয়ের মাধ্যমে পিছিয়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক মেয়ে যারা স্কুলে পড়ালেখায় ভালো করত, তারা একসময় হারিয়ে যাচ্ছে এই বাল্যবিয়ের কারণে, অথচ তারা ভবিষ্যতে দেশের সম্পদে পরিণত হতো। তাই সরকারকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে এই সমস্যাটিকে নিয়ে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে সরকার তাদের নির্বাচনী প্রচারণা এবং ইশতেহারে এই বিষয়টি সংযুক্ত করতে পারে। এছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা, দরিদ্র পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক চাপ কমাতে সাহায্য করা, মেয়েদের বিনা খরচে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা, বাল্যবিয়ে রোধে প্রণীত আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং সর্বশেষ কার্যকর অভিনব পন্থায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন। অন্যথায় সমস্যাটি টেকসই উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

হামিদা রহমান

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়