নিজস্ব প্রতিবেদক: আর কয়েকদিন পরেই আনন্দের ঈদ। এ সময় শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাবে অধিকাংশ মানুষ। তাই ঈদের আগে প্রতিবছরই বাস-ট্রেনের টিকিট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন যাত্রীরা। আর দুশ্চিন্তা মুক্ত করতেই গতকাল সোমবার থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের জন্য ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এদিন সকাল থেকে বেশ চাপ ছিল বাস কাউন্টারগুলোয়; তবে ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে ভিড় নেই। টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে এমনটি চিত্র লক্ষ করা গেছে।
বাস কাউন্টারগুলোয় দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট হাতে পেলেও চাহিদার বিপরীতে টিকিটের সংখ্যা কম বলে বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতারা। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কথা স্বীকার করে পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদযাত্রার পর ফিরতি পথে যাত্রী ‘কম থাকায়’ ব্যবসার স্বার্থে তারা কিছুটা বেশি দাম নিচ্ছে।
গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোয় অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ২৩ জুন থেকে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় আগের দিন বৃহস্পতিবারের টিকিটের চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন বাস কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা।
গাবতলী ও কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির মধ্যেও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় বাস টিকিটের জন্য মানুষের ছিল দীর্ঘ লাইন। তবে দক্ষিণবঙ্গমুখী কাউন্টারে সেই চিত্র ছিল অনেকটা ভিন্ন।
কল্যাণপুরে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে সাড়ে ১১টায় বগুড়ার দুটি টিকিট হাতে পান অনিক আহমেদ। আগে ৩৫০ টাকার টিকিটের দাম ৪৭০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘অনেক অপেক্ষা করে ২২ তারিখ বিকালের দুটি টিকিট নিয়েছি। ঈদের সময় বলে দাম বেশি নিয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কিছু তো করার নেই। আসলে দেখার কেউ নেই। একই কাউন্টারে সকাল ৬টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে জয়পুরহাটের অগ্রিম টিকিট কেনেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নাজমুল হুসেইন।’
তিনি বলেন, সকালের দিকে আসায় এবং বৃষ্টি থাকায় টিকিট সহজে পেয়েছি। কিন্তু সেটা ২১ তারিখ সকালের।
যাত্রীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের রাজশাহীগামী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, যাত্রীরা বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করছে, সেটা ঠিক। আর টিকিট হাতে রেখে দেওয়ার কথাও জানান তারা।
তিনি বলেন, কিছুটা বেশি দাম নিচ্ছি। অন্য সময়ে আসা-যাওয়ার ট্রিপে যাত্রী পূর্ণ থাকায় বিআরটিএর বেঁধে দেওয়া দাম থেকে কিছুটা কম নিতে পারি। ফিরতি পথের কথা চিন্তা করে এখন কম নেওয়া সম্ভব নয়।
প্রথমদিন বেলা ১১টার রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী সব অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
পাঁচটি কাউন্টারে ভাগাভাগি করে অগ্রিম টিকিট দেওয়ায় শ্যামলী পরিবহনে যাত্রীদের ভিড় ছিল অন্যদের তুলনায় কিছুটা কম।
তবে একই স্থান থেকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর টিকিট দেওয়ায় হানিফ এন্টারপ্রাইজ গাবতলী বালুর মাঠ এলাকার কাউন্টারে ছিল উপচেপড়া ভিড়; এসআর ট্রাভেলসের গাবতলী কাউন্টারেও যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক।
এদিকে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়ানোর চার ঘণ্টা পর ঠাকুরগাঁওয়ের টিকিট হাতে পান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হোসেন আকবর। অন্য সময়ে ৬০০ টাকার বিপরীতে সাড়ে ৮০০ টাকা নিয়েছে। তবুও টিকিট পেয়েছেন এটাই তার বড় সান্ত¡না।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক মোশাররেফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের একেকটা রুটে চার-পাঁচটা গাড়ি আর যাত্রীর সংখ্যা দেড়-দুই হাজার। এত টিকিটের ব্যবস্থা তো আমরা করতে পারব না।’
তিনি বলেন, হানিফের অধিকাংশ রুটে ২২ তারিখের টিকিট নেই বললেই চলে। তার মধ্যে ২২ তারিখ বিকালের টিকিট চাচ্ছেন অনেক যাত্রী।
বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআরটিএর ‘নির্ধারিত ভাড়া’ তারা নিচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে উত্তরাঞ্চলের অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের ভিড় দেখা গেলেও দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলামুখী কাউন্টারগুলোয় সেই চিত্র ছিল অনেকটা ভিন্ন। গাবতলীর বাস টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের অগ্রিম টিকিট দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে কাউন্টার ব্যবস্থাপকদের। হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার চৌধুরী আলম বলেন, ‘সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, এজন্য হয়তো কম। আবার অফিস টাইমও। দেখা যাক, বিকালের দিকে কেমন বাড়ে।’ আবার এ জেলাগুলোয় অগ্রিম টিকিটের চাহিদা উত্তরাঞ্চলের তুলনায় কম বলেও জানান তিনি।
বাসের টিকিটে বেশ চাপ থাকলেও ট্রেনে তেমন চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। ঈদের ঘরমুখো মানুষের সুবিধার্থে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত টিকিট থাকলেও প্রথম দিনে টিকিট সংগ্রহে তেমন যাত্রী নেই স্টেশনে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন বিক্রি করা হয়েছে ২১ জুনের টিকিট। প্রতি যাত্রীকে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ চারটি করে টিকিট। কিন্তু টিকিটের চাহিদা তেমন নেই। সোমবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেলো।
ট্রেনে ২১ জুনের টিকিটের তেমন চাহিদা না থাকলেও পরের দুদিন ২২ ও ২৩ জুন টিকিটের ব্যাপক চাহিদা থাকবে বলে জানিয়েছে স্টেশন সূত্র। এ দুদিনে রাজধানী ছেড়ে যাবেন কর্মজীবী মানুষের সবচেয়ে বড় অংশ।
গতকাল সকালে কিছু টিকিট বিক্রি হলেও বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে দ্রুত কমতে থাকে যাত্রীর সংখ্যা। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী আর দিনাজপুর ছাড়া সব জেলার টিকিট কাউন্টার ফাঁকা হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, ভোর থেকে দীর্ঘ লাইনে টিকিটের জন্য মানুষ অপেক্ষমাণ থাকলেও টিকিট বিক্রি শুরু হলে তা আস্তে আস্তে কমে যায়।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিন ২১ জুনের জন্য ২২ হাজার ১২২টি টিকিট দেওয়া হবে। এখনও অনেক টিকিট অবিক্রীত রয়ে গেছে। সারাদিন টিকিট দেওয়া হবে। আশা করছি, যাত্রীরা প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকিট পাবেন।
শুরুর দিনই টিকিটের চাহিদা কম থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রোববার রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকে টিকিটের জন্য আসতে পারেননি। তবে ২২ ও ২৩ জুনের (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) টিকিটের চাহিদা বেশি থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
কমলাপুরে দিনাজপুরের টিকিট নিতে আসা শিক্ষার্থী শওকত আলী বলেন, সাহ্রি খেয়ে ভোর সাড়ে ৪টায় টিকিট নিতে এসেছি। সকাল ১০টায় টিকিট পেলাম। অনেক বড় লাইন ছিল, এখন কমে গেছে। সহজেই টিকিট পেয়েছি, ভালো লাগছে।
জয়পুরহাটের যাত্রী আক্কাস আলী জানান, ভোরেই টিকিটের জন্য স্টেশনে আসার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য আসতে পারেননি। তবে এখন এসে ভালোই হয়েছে, কাউন্টার ফাঁকা।
গত ৮ জুন রাজধানীর রেল ভবনে সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানান, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধার্থে ১২ জুন থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। যাত্রীদের ভ্রমণ সুবিধার্থে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি করা হবে। প্রথম দিন গতকাল ২১ জুনের টিকিট বিক্রি হয়েছে। এরপর ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ জুন যাত্রীরা যথাক্রমে ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫ জুনের টিকিট কাটতে পারবেন যাত্রীরা।