ইসমাইল আলী: পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে মাওয়া, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। এতে পরামর্শক নিয়োগের মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে। পাশাপাশি রেলপথটি নির্মাণে ডিজাইন রিভিউ টিমেও পরিবর্তন আনা হয়। এতে বেড়ে যাচ্ছে পদ্মা রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শক ব্যয়।
সম্প্রতি রাজধানীর রেলভবনে প্রকল্পটির পিআইসি কমিটির চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জানানো হয়, অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও ভৌত অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ। এ সময় প্রকল্পটির সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকের তথ্যমতে, প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগ করা হয় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। যদিও পরামর্শক নিয়োগের মেয়াদ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্তই রয়ে গেছে। তাই পরামর্শক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রথম দফা লকডাউন ছিল। আবার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে চলতি বছর ১৪ এপ্রিল থেকে ১১ আগস্ট লকডাউন ছিল। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় চুক্তির শর্তানুসারে নির্মাণকাজের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে। তাই পরামর্শকের মেয়াদও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন পড়ছে।
এর বাইরে পরামর্শক কর্তৃক প্রথম ১৮ মাসের মধ্যে সব ডিজাইন দাখিল করার কথা ছিল। এজন্য ডিজাইন রিভিউ টিমের জনমাস কম ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ভেরিয়েশন ও সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে রেলপথটির নকশা পরিবর্তনের কারণে কাজের পরিধি ও ধরন পরিবর্তন হয়েছে। ফলে নতুন পদ সৃষ্টিসহ জনমাস বাড়াতে হয়েছে। এতে পরামর্শক খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে।
সব মিলিয়ে পরামর্শক খাতে প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ ছিল ৯৪০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। তবে এখন এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ পরামর্শক নিয়োগ ব্যয় বেড়ে গেছে ৪৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ৪৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। যদিও পরামর্শক খাতে বাড়তি কোনো অর্থ বরাদ্দ প্রকল্পটিতে নেই।
বৈঠকে এ প্রসঙ্গে জানানো হয়, সংশোধিত ডিপিপিতে পরামর্শক খাতের জন্য মোট ব্যয় ধরা আছে ৯৪০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তবে সংশোধিত ডিপিপিতে ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি (ভৌত সমন্বয়) বাবদ ৩৪৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ও প্রাইস কনটিনজেন্সি (মূল্য সমন্বয়) খাতে ৫২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। এখান থেকেই পরামর্শক খাতের অতিরিক্ত ব্যয় আপাতত সমন্বয় করা যাবে।
এদিকে নির্মাণকাজের ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। সেখানে পরামর্শকের আইটেমভিত্তিক হ্রাস বা বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত করা ও ব্যয় সমন্বয়ের সিদ্ধান্তও হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার বলেন, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরামর্শক কাজে বেশকিছু পরিবর্তন হয়েছে, কাজের পরিধিও বেড়েছে। আবার কভিডের কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হওয়ায় চুক্তির মেয়াদও বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরামর্শক নিয়োগ ব্যয় বাড়ছে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার ৮২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তবে ঠিকাদারের বিলসহ অন্যান্য বিল পরিশোধে আরও তিন হাজার ১৪৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লাগবে। ফলে প্রকল্পটির জন্য চলতি অর্থবছর বরাদ্দ বাড়িয়ে ছয় হাজার ৯৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা করা প্রয়োজন। তা না হলে বরাদ্দ সংকটে প্রকল্পটির কাজ আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়।
উল্লেখ্য, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালে অনুমোদনকালে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। যদিও ২০১৮ সালে নির্মাণ ব্যয় এক দফা বাড়ানো হয়েছে। এতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দেবে চীন। চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে কঠিন
শর্তে এ ঋণ (বায়ার্স ক্রেডিট) নেয়া হচ্ছে। বাকি ১৮ হাজার ২১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। এদিকে রেলপথটি নির্মাণব্যয় আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে এক হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। এতে রেলপথ নির্মাণব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পটির নকশা জটিলতার কারণে রেলপথ নির্মাণব্যয় আরও বাড়বে। এর বাইরে বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণেও প্রকল্প ব্যয় বাড়বে। পরামর্শক নিয়োগের বাড়তি ব্যয়ও সে সময় সংশোধিত ডিপিপিতে যুক্ত করা হবে।