নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ীদের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু তাতে বস্তবতা ফুটে উঠছে না। আর অভ্যন্তরীণভাবে মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর বাজার তদারকিতে দুর্বলতা দায়ী। এমন মন্তব্য করেছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতির কারণ ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বাজার তদারকি নিয়ে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম)। ‘মূল্যস্ফীতি সরকারি পরিসংখ্যান বনাম প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতা’ শিরোনামের এই ওয়েবিনারটিতে এমন মন্তব্য করেন অতিথিরা।
শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের চেয়ারম্যান ড. বজলুল হক খন্দকার, সানেমের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।
প্রতিবেদনে সেলিম রায়হান উল্লেখ করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলো যে প্রতিবেদন দিচ্ছে তাতে বাস্তবিকভাবে সঠিক চিত্র আসছে না। আবার সরকারি পরিসংখ্যান বিভাগ বিবিএস যে ভিত্তি বছর ধরে হিসাবটি করছে তাও অনেক পুরনো। হিসাবে পদ্ধতিতেও প্রশ্ন রয়েছে। ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যর ওপর ভিত্তি করে তারা প্রতিবেদন তৈরি করছে। অথচ ২০১৫ সালেও শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য আছে। সরকারের উচিত বাস্তব চিত্রকে সামনে নিয়ে আসা। তাহলে সমাধান সম্ভব হবে।
আবার সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি যা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তার চেয়ে দ্বিগুণ প্রভাব পড়ছে মানষের ওপর। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্তদের ওপর এ হার দ্বিগুণের বেশি। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থা যে তথ্য দিচ্ছে তা যথাযথ নয়। তথ্যের বিভ্রান্তি থাকলে করোনার প্রভাব থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আরও ধীরগতিতে হবে। বিবিএস আগে প্রান্তিক আয়ের মানুষের মূল্যস্ফীতির অবস্থান কেমন তা প্রকাশ করতো-কিন্তু এখন আর করছে না বলেও মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান।
এদিকে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিবিএসর তথ্য অনুযায়ী খাদ্যবহির্ভূত পণ্যর মূল্যস্ফীতি হচ্ছে গত জানুয়ারিতে হয়েছে ছয় দশমিক ২৬, আর খাদ্যে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। জাতীয়ভাবে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে পাঁচ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
গ্রামীণ পর্যায়ে গড় মূল্যস্ফীতি গত জানুয়ারিতে ছিল ছয় শতাংশ। কিন্তু খাদ্যে ছিল পাঁচ দশমিক ৯৪ ও খাদ্যবহির্ভূতে ছয় দশমিক ৩২ শতাংশ। এটি শহরের চেয়ে বেশি। অথচ গ্রামেও খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়। এটি কেন হচ্ছে-তা দেখা প্রয়োজন। অথচ সানেম ২০১৮ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। সেই জরিপে দেখা গিয়েছে বিবিএসের দেয়া মূল্যস্ফীতির চেয়ে বাস্তবে অনেক বেশি।
সাম্প্রতিক বাজার চিত্র বিশ্লেষণ করে সানেমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- তৈরি পোশাক কর্মী, দিন মজুর, রিকশাচালক ও ছোট আকারের ব্যবসায়ীদের গত ফেব্রুয়ারি শেষে শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি দেখেছে ১২ দশমিক ৪৭। আগের জানুয়ারিতে ছিল ১১ দশমিক ৩৩। আর গ্রামীণ এলাকায় ফেব্রুয়ারিতে এই হার ১২ দশমিক ১ ভাগ। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
এ নিয়ে আরও জানানো হয়, প্রান্তিক মানুষ খাদ্যপণ্য কিনতে ব্যয় করছে মোট আয়ের ৬৫ ভাগ। শহরে মানুষ ব্যয় করছে ৬১ ভাগ। নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ চাপে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় এই রিপোর্টে। অনেকে ভাতের পরিবর্তে অন্যকিছু খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে বলেও জানানো হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সানেমের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, দেশীয় বাজারে মূল্যস্ফীতির জন্য কতটুকু বৈশ্বিক পরিস্থিতি দায়ী তা বের করা প্রয়োজন। আর অভ্যন্তরীণভাবে কতটুকু কৃত্রিমভাবে হচ্ছে তাও বের করা যেতে পারে। এটি প্রয়োজনও। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো করা প্রয়োজন যাতে প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে।