বাস-ট্রাকে ভারত-শ্রীলঙ্কার চেয়ে দেড়গুণ টোল প্রস্তাব

ইসমাইল আলী মাসুম বিল্লাহ: সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে। এতে দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া সম্ভব হবে। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪০ কোটি ডলার বা ২৮ হাজার কোটি টাকা। এটি ব্যবহারে যানবাহনকে টোল দিতে হবে। যদিও এতে ট্রাক-বাসে টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী ভারত বা শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন এক্সপ্রেসওয়ের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বা তারও বেশি। তবে ব্যক্তিগত গাড়ির টোলে তুলনামূলক ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ।

যদিও ২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটির নির্মাণ ব্যয়ের ৩০ শতাংশ ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ড (ভিজিএফ) হিসেবে সরবরাহ করবে সরকার। তারপরও টোলের উচ্চ হারে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে যানবাহন বিশেষত পণ্যবাহী যান অনুৎসাহিত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয়, কিলোমিটারপ্রতি ব্যয়, বিভিন্ন প্রকল্পের তুলনা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ভিজিএফ চূড়ান্তপূর্বক টোল হারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত আন্ডারপাস রাখা হয়েছে, যাতে এর আশপাশে বসবাসকারী জনগণ ও যানবাহন সহজে এক পাশ থেকে আরেক পাশে যাতায়াত করতে পারে। এছাড়া বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গড়ে এক দশমিক দুই কিলোমিটার পরপর ডান দিকে টার্নিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে এটি হবে গড়ে দুই দশমিক এক কিলোমিটার পরপর। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও ব্যস্ততম জনপদগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়েটির প্রতি কিলোমিটার নির্মাণ পড়বে গড়ে ৭৯ টাকা ২৩ পয়সা। এতে প্রতি কিলোমিটার লেনের নির্মাণ ব্যয় পড়বে আট টাকা ৭৪ পয়সা। আর চার লেনের ঢাকা বাইপাস নির্মাণে এ ব্যয় পড়ছে ৫৪ টাকা। এতে প্রতি কিলোমিটার লেনের ব্যয় পড়ছে ৯ টাকা। এছাড়া প্রকল্পটির পেভমেন্ট ও মাটির কাজের (আর্থ ওয়ার্ক) ব্যয় পড়বে ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের মতোই। এর বাইরে জয়দেবপুর-এলেঙ্গা ও এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্পের ব্যয়ের সঙ্গেও তুলনা দেওয়া হয়েছে এক্সপ্রেসওয়েটির ক্ষেত্রে। এতেও প্রায় সম ব্যয় পড়ছে এক্সপ্রেসওয়েতে।

এক্সপ্রেসওয়েটির মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ বা আট হাজার ৪০০ কোটি টাকা ভিজিএফ হিসেবে দেবে সরকার। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ করতে হবে ১৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর এক্সপ্রেসওয়েটিতে দৈনিক গড়ে ৮৭ হাজার গাড়ি চলাচল করবে। এগুলো থেকে ২০-২৫ বছরে টোলের মাধ্যমে বিনিয়োগ তুলে নেবে কোম্পানিটি।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে ভারতের চারটি এক্সপ্রেসওয়ের ২০২২-২৩ সালের টোল হারের তুলনা উঠে এসেছে সওজের প্রস্তাবনায়। এতে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ২১৮ কিলোমিটার। এতে প্রতি কিলোমিটারে বড় বাসের টোল ১৫ টাকা ও বড় ট্রাকের টোল হবে ২১ টাকা। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে যাওয়া বা আসার জন্য বড় বাসের টোল দিতে হবে তিন হাজার ২৭০ টাকা ও বড় ট্রাকের টোল দিতে হবে চার হাজার ৫৭৮ টাকা। এছাড়া তিন টাকা কিলোমিটারপ্রতি ব্যক্তিগত গাড়ির টোল হবে ৬৫৪ টাকা।

যদিও ২০২২-২৩ সালে ভারতের এলাহাবাদ এক্সপ্রেসওয়েতে কিলোমিটারপ্রতি বড় বাস ও ট্রাকের টোল হবে ১১ টাকা ৩০ পয়সা। যদিও ব্যক্তিগত গাড়ির টোল কিলোমিটার তিন টাকা ৪৮ পয়সা। আবার মুম্বাই-পুনে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস ও ট্রাকে কিলোমিটারপ্রতি টোল হার যথাক্রমে ১১ টাকা ৩৩ পয়সা ও ১৯ টাকা ৬২ পয়সা। আর ব্যক্তিগত গাড়ির টোল কিলোমিটারপ্রতি তিন টাকা ৮৭ পয়সা।

এর বাইরে যমুনা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতি কিলোমিটারে বাস ও ট্রাকের টোল হার ১১ টাকা ১২ পয়সা। আর ব্যক্তিগত গাড়ির টোল হার কিলোমিটারপ্রতি তিন টাকা ৪৭ পয়সা। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় নির্মিত সাউদার্ন এক্সপ্রেসওয়ের বাস ও ট্রাকে কিলোমিটারপ্রতি টোল হার যথাক্রমে ৮ টাকা ৬০ পয়সা ও ১১ টাকা ১০ পয়সা। যদিও বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েগুলোর টোল হার আরও কম।

জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে বাস ও ট্রাকে কিলোমিটারপ্রতি টোল হার প্রস্তাব করা হয়েছিল যথাক্রমে ১৭ ও ২৭ টাকা। এক্ষেত্রে টোল নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে তা কমিয়ে বাসে ১৫ ও ট্রাকে ২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটি এখনও চূড়ান্ত নয়। ভিজিএফ নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় টোল হার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

তথ্যমতে, এক্সপ্রেসওয়েটিতে মাঝারি ট্রাকের জন্য কিলোমিটারপ্রতি টোল হার হবে ১৩ টাকা, ছোট ট্রাকে ১০, মিনি বাসে ১২, মাইক্রো বাসে আট ও ইউটিলিটি যানে পাঁচ টাকা। এতে এক্সপ্রেসওয়েতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গেলে বা আসলে মাঝারি ট্রাকে টোল দিতে হবে দুই হাজার ৮৩৪ টাকা, ছোট ট্রাকে দুই হাজার ১৮০, মিনি বাসে দুই হাজার ৬১৬, মাইক্রো বাসে এক হাজার ৭৪৪ ও ইউটিলিটি যানে এক হাজার ৯০ টাকা। এসব যানবাহনেও টোল হার ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন এক্সপ্রেসওয়ের তুলনায় অধিক হারে প্রস্তাব করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিদ্যমান মহাসড়কের পাশে ৩০ শতাংশ উড়ালপথ ও ৭০ শতাংশ ভূমিতে নির্মাণ করা হবে ছয় লেনের এ এক্সপ্রেসওয়ে। এর সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এক্সপ্রেস রেলপথও নির্মাণ করা হবে। এজন্য কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুতে সড়ক ও রেলপথ উভয় ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। মূল ছয় লেনের সড়ক ছাড়াও প্রকল্পটির আওতায় দুই দিকে সার্ভিস রোড, সাতটি ইন্টারচেঞ্জ, তিনটি সার্ভিস স্টেশন, ৬৪টি ওভারপাস, ৪৪টি ভেহিকল আন্ডারপাস, চারটি মাঝারি সেতু ও ২৮টি ছোট সেতু নির্মাণ করা হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০