নিজস্ব প্রতিবেদক: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে বিকল্প বাহন রিকশা, সিএনজি ও রাইডশেয়ার। দ্বিতীয় দিনের ধর্মঘটে বাধ্য হয়ে যারা এসব বাহনে উঠছেন তাদেরও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। আবার বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটেই রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে এসব বাহনের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ জনসাধারণ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, সরকার জনগণকে এভাবে ভোগান্তিতে না ফেলে শিগগির এ ব্যাপারে যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, আসাদগেট, শ্যামলী, আগারগাঁও, মিরপুর ১০, ফার্মগেটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলিগলিতে চলছে রিকশার দৌরাত্ম্য। গন্তব্যে যেতে রিকশাচালকরা হাঁকছেন অতিরিক্ত ভাড়া। আর এক একটি সিএনজি দেখলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। এ সুযোগে বেশি ভাড়া চাইছেন সিএনজিচালকরাও। একই অবস্থা ভাড়ায়চালিত মোটরবাইকগুলোরও।
শুক্রবার থেকে শুরু হয় ধর্মঘট। তবে ছুটির দিন হওয়ায় খুব একটা প্রভাব পড়েনি জনজীবনে। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। গতকাল তাদের ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা সংস্থার কর্মীরাও। সকাল থেকেই তাদের সড়কের মোড়ে মোড়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বাস বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাস। যাতে কভিডের এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরে থাক কোনোরকম জায়গা পাওয়াই যেন হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কোনো একটি বাস আসলেই হুড়োহুড়ি করে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ওঠা শুরু করছেন অপেক্ষারতরা। প্রতিটি বাসেই দেখা গেছে ভিড়।
শ্যামলী থেকে উত্তরায় অফিস করেন বেসরকারি একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্যামল। উত্তরায় নামার পর তিনি বলেন, সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করেছি। সবশেষ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে একটি সিএনজিতে ঠিক করলাম। শ্যামলী থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে উত্তরা আসলাম। বাস চলাচল বন্ধের সুযোগে যে যেভাবে পারছে এ সুযোগের অপব্যবহার করে চলেছে।
মিরপুরের ব্যবসায়ী সাইফুল বললেন, বাস চলাচল বন্ধ আছে। এ সময় এই যে সিএনজি ও রিকশা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে, এগুলো নজরদারির জন্য তো কাউকে দেখছি না। কল্যাণপুর থেকে প্রতিদিনই আমাকে কাজের জন্য মিরপুরের দিকে যেতে হয়। রিকশায় যেখানে প্রতিদিন ৪০ টাকা করে যেতাম, গত দু’দিন ধরে বাস বন্ধ থাকায় সেখানে আমাকে যেতে হচ্ছে ৮০ টাকা করে।
মোহাম্মদপুরের একটি সরকারি কলেজের শিক্ষক রেজাউর রহমান। সকালে জরুরি কাজে কলেজের উদ্দেশে বের হয়েছেন তিনি। এ শিক্ষকের ভাষ্য, ‘রাস্তায় যা চলছে তা রীতিমতো এক ধরনের ডাকাতি। গন্তব্যে যেতে রিকশা, সিএনজি কিংবা মোটরসাইকেলে ভাড়া চাইছে দ্বিগুণেরও বেশি।’
গতকাল সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে মালিকদের গাড়ি চালানোর বিষয়টি উল্লেখ করে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান বলেন, নতুন করে ভাড়া নির্ধারণের জন্য মিটিং হবে রোববার। এর আগ পর্যন্ত মালিক-শ্রমিকরা গাড়ি বন্ধ রেখেছেন।