আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর: মৃৎশিল্পের অন্যতম নান্দনিক শাখা অলংকার শিল্প। যাকে আমরা মাটির গয়না হিসেবেই চিনি। শাড়ির সঙ্গে মাটির গয়নার
যুগলবন্দি বৈশাখি উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। এ উৎসবে মাটির গয়না ব্যবহার করেননি এমন বাঙালি ললনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সাদা শাড়ি-লালপাড়ের সঙ্গে মাটির গয়নার বিন্যাস যেন বাঙালিয়ানারই বহিঃপ্রকাশ।
মাটি দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করেন কুমাররা। এক সময়ে বেশ সম্মানজনক পেশা ছিল এটি। ঘরের হাঁড়ি পাতিল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবে থাকতো মাটির ব্যবহার। শিল্প বিপ্লবের পর মানুষের গৃহস্থালি সামগ্রীতে পরিবর্তন আসে। মাটির জায়গায় স্থান করে নেয় তামা, কাঁসা, সিলভার ও নানা ধাতু দিয়ে তৈরি করা সামগ্রী। তবু আমাদের শেকড়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মাটির অলংকারের কদর আজও কমেনি। হয়তো তাই মাটি দিয়ে শুধু গৃহস্থালি আসবাবপত্রই নয়; বরং বিভিন্ন নকশা অলংকার ও প্রসাধনী সামগ্রীও তৈরি করা হয়। ফলে এর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েই চলেছে।
মাটির তৈরি গয়না মানেই যে মেটে রং, তা নয়। নানা রঙের মাটির গয়না পাওয়া যায়। রয়েছে বৈচিত্র্যও। এখন শুধু মাটি দিয়েই তৈরি হয় না গয়না, এর সঙ্গে নানা ধরনের পাথর ও ধাতু মিশিয়ে তৈরি করা হয় মাটির গয়না। আকর্ষণীয় এসব গয়নার প্রতি তরুণীদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। আর পয়লা বৈশাখে এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
পয়লা বৈশাখের পাশাপাশি পয়লা ফাল্গুন, চৈত্র সংক্রান্তি, হেমন্ত উৎসব প্রভৃতিতেও মাটির গয়নার চাহিদা রয়েছে। উৎসব ঘিরে অনুষ্ঠিত মেলায় মাটির গয়নার বিক্রিবাট্টাও হয় বেশ। রাজধানীর রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, দোয়েল চত্ব¡র ও টিএসসি সংলগ্ন এলাকার ফুটপাতে বিক্রি হয় এ গয়না। তাছাড়া ঢাকার নানা শপিং মলে মাটির গয়না ও শোপিস পাওয়া যায়।
আর ক’দিন পরই আমরা বরণ করে নেব বাংলা নতুন বছর ১৪২৪। পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে মাটির গয়না কেনার জন্য তরুণীরা ভিড় করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়। চারুকলা ও দোয়েল চত্বরের দিকেই তুলনামূলক ভিড় বেশি। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের পাতাল মার্কেটের গয়নার দোকানেও ভিড় লেগে আছে।
মাটির গয়নার মূল্য অপেক্ষাকৃত কম। দোয়েল চত্বরের মাটির গয়না ব্যবসায়ী শহীদুল হক বলেন, ‘এখানে বালার দাম ৫০ থেকে ৩০০ টাকা, কানের দুল ৭০ থেকে ২০০ টাকা, লকেট ৫০ থেকে ২০০ টাকা, ঝুমকা ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, মাটির পুঁতির মালা ৮০ থেকে ২৫০ টাকা, সাধারণ গয়নার সেট ৮০ থেকে ২৫০ টাকা, রং ছাড়া সেট ৫০ থেকে ২০০ টাকা ও ব্রেসলেট ৩০ থেকে ৩০০ টাকা।’ তবে শপিং মলের এসব গয়না অধিক দামে বিক্রি হয় বলে ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে।
সাংবাদিক
Add Comment