Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 3:51 am

বাড়তি গ্যাসের নিশ্চয়তা পেতে বেশি দাম দিতে রাজি পিডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির যুক্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। খাতভেদে ২০ থেকে ৩৭২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ২২১ শতাংশ। তবে বিদ্যমান সরবরাহের চেয়ে বাড়তি গ্যাসের নিশ্চয়তা পেলেই শুধু বেশি দাম দিতে রাজি আছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট চুক্তির শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। অন্যথায় গ্যাসের প্রস্তাবিত বাড়তি দাম দিতে রাজি নয় পিডিবি।
তথ্যমতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট তিন টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের ইউনিটপ্রতি দাম দুই টাকা ৭১ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর শিল্প-কলকারখানায় সাত টাকা ৭৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা, গাড়িতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম প্রতি ইউনিট ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে ১৬ টাকা ও চা বাগানে প্রতি ইউনিট সাত টাকা ৪২ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৮০ পয়সা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর এরই মধ্যে গণশুনানি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে পিডিবির মতামত জানতে চায় বিইআরসি। চিঠির জবাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে পিডিবি দুটি শর্ত তুলে ধরে।
প্রথম শর্তটি হলো, বিদ্যুৎ খাতে বর্তমানে যে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয় তার দাম বৃদ্ধি করা যাবে না। ওই গ্যাস আগের দামেই অর্থাৎ প্রতি ইউনিট তিন টাকা ১৬ পয়সা দরেই পিডিবির কাছে বিক্রি করতে হবে। এলএনজি আসার পর অতিরিক্ত যে গ্যাস সরবরাহ করা হবে তার জন্য বাড়তি দাম দিতে প্রস্তুত পিডিবি।
সংস্থাটির বিকল্প শর্ত ছিল প্রস্তাবিত নতুন দরেও গ্যাস কিনতে প্রস্তুত পিডিবি। তবে এক্ষেত্রে বাড়তি গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ খাতে পেট্রোবাংলা কতটুকু গ্যাস সরবরাহ করবে তা ঘোষণা দিতে হবে। সে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতে পিডিবির সঙ্গে পেট্রোবাংলাকে চুক্তিও করতে হবে। আর ঘোষিত পরিমাণের চেয়ে কম গ্যাস সরবরাহ করলে সেক্ষেত্রে পিডিবিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প হিসেবে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল যতটুকু ব্যবহার করতে হবে তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পেট্রোবাংলাকে।
সূত্র জানায়, বর্তমান সরবরাহের অতিরিক্ত গ্যাস পাওয়া গেলে প্রথমেই নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটের সামিটের ৩৪৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রে তা সরবরাহ করবে পিডিবি। এরপর ভেড়ামারার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ দুই কেন্দ্রে বর্তমানে ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৯-২০ টাকা। ১০ টাকা দরে গ্যাস কিনলেও এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়বে ১০ টাকার কম। ফলে পিডিবির ব্যয় অনেকটা সাশ্রয় হয়। তাই বাড়তি গ্যাস পাওয়া গেলে বর্ধিত দাম দিতে আপত্তি নেই সংস্থাটির।
জানতে চাইলে পিডিবির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক পরিচালন) মো. কাওসার আমীর আলী শেয়ার বিজকে বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে কয়েকটি কেন্দ্রে ডিজেলে উৎপাদন করা হচ্ছে। এলএনজি আসার পর গ্যাস পাওয়া গেলে অন্তত দুটি কেন্দ্রে তা সরবরাহ করা হবে। এতে যে ব্যয় সাশ্রয় হবে তাতে গ্যাসের দাম বাড়লেও পিডিবির লোকসান হবে না। বরং উৎপাদন ব্যয় কিছুটা কমানো যাবে।