নাজমুল হুসাইন: গমের সংকটের কারণে গত দুই মাস অস্থিতিশীল ছিল দেশের ময়দার বাজার। যা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানিই তাদের সরবরাহ ও দাম কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু শুধু ব্যতিক্রম সিটি গ্রুপের ‘তীর’ ব্র্যান্ডের ময়দার দাম। এখনও অন্য ব্র্যান্ডের ময়দা থেকে তীর ময়দার দামে পার্থক্য বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। বাজারে অন্যতম সরবরাহকারী হওয়ায় সিটি গ্রুপ ইচ্ছাকৃতভাবে অসাধু পন্থা অবলম্বন করছে এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেকদিন থেকেই সিটি গ্রুপ তাদের মিল থেকে ডিও অর্ডারে ময়দা সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল। তখন ময়দার সংকট ছিল, যা এখন তা কেটে গেছে। এখন মিল থেকে আগের মতো ময়দা সরবরাহ চালু করেছে সিটি গ্রুপ। কিন্তু ডিও অর্ডারে ময়দা সরবরাহ না করে তারা সরাসরি বিক্রি করছে। কারণ ওইসব ডিও আগের কম দামে কেনা, আর সরাসরি বিক্রি করলে অতিরিক্ত মুনাফা করা যাচ্ছে- যা নিয়মবহির্ভূত। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে।
তবে ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে সিটি গ্রুপ। গ্রুপের বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মিল থেকে স্বভাবিকভাবেই ডিও অর্ডারের পণ্য দেওয়া হচ্ছে। বাজারেও কোনো সরবরাহ ঘাটতি নেই।’
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারের প্রভাবেই আগেও দাম বেশি ছিল। এখনও বেশি। শুধু সিটি নয়, সব কোম্পানির ময়দাই বেশি দামে বিক্রি করছে। সিটির ময়দার দাম বেশি হলে ভোক্তারা তা কিনবে কেন’- এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ডের ময়দা প্রতি বস্তা কেনাবেচা হচ্ছে এক হাজার ৩৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায়। তবে তীর ময়দা বস্তাপ্রতি দাম এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৮৭০ টাকা পর্যন্ত। ওই ব্র্যান্ডের ময়দা সরবরাহ কম বলে, অনেকটা মনমতো দামেই মজুদকারীরা পণ্যটি বিক্রি করছেন। ফলে বাজার ঘুরে তীরের ময়দা একেক দোকানে একেক দামে পাওয়া যাচ্ছে।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি আটা-ময়দার ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ‘ডিও কেটে বসে আছি। সিটির মিল থেকে ময়দা দেয়নি। তাই গতকাল মৌলভীবাজার থেকে সব ব্যবসায়ী মিলে পাইকারি এক ট্রাক ময়দা এনেছি। পাইকারিতে তীরের ময়দা যে যা দামে পারে বিক্রি করছে।’
দাম বেশি হলে কেন ভোক্তারা সিটির ময়দা কেনে এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দেশে যে পরিমাণে ময়দার চাহিদা তার অর্ধেকের বেশি জোগান দেই এই কোম্পানি। তাদের ময়দা না বিক্রি করলে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে না।’
শুধু বস্তায় নয়, গমের সংকট শুরুর পর থেকেই খোলা বাজারে প্যাকেটের ময়দা কেজিপ্রতি ৪ টাকা ও খোলা ময়দা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে
৮-১০ টাকা বেশি দামে। খোলা বাজারে প্রতি কেজি ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা কেজিতে। আর সবগুলো কোম্পানির প্যাকেটের ময়দা বিক্রি হচ্ছে এক কেজি ৪৪ টাকা এবং দুই কেজির প্যাকেট ৮৪ টাকা দরে। দুই ধরনের প্যাকেটই বিক্রি হচ্ছে ৪ টাকা বেশি দামে।
এ বিষয়ে মৌলভী বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, সিটি গ্রুপ যে বাজারে ডিও অর্ডারে ময়দা সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। অনেকেই ডিও কেটে মাল পাচ্ছে না। সিটি মিলে
সীমিত ডিও’র মাল দিচ্ছে। এতে যারা পাচ্ছে তাদের ডিও কমপক্ষে এক-দেড় মাস আগের। কিন্তু ডিও’র বাইরে অন্য ব্যবসায়ীরা মাল পাচ্ছে এমন অভিযোগ বাজারের সবারই।
প্রসঙ্গত, গত দুই মাস আগে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ময়দা সরবরাহ কম ছিল। এমনকি ময়দা সরবরাহকারী বড় কয়েকটি মিলও বন্ধ হয়ে যায়। কারণ তখন ময়দা তৈরিতে ব্যবহৃত উন্নতমানের কানাডার গমের প্রচণ্ড সংকট দেখা দেয়। ফলে বাজারে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় ময়দার বস্তা দাম বেড়ে এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু এখন সেই সংকট কেটে গেছে। বাজারে গত সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন কোম্পানি ময়দা সরবরাহ চালু করেছে। অধিকাংশ বড় কোম্পানিগুলো তাদের ব্র্যান্ডের ময়দা আগের দামে বিক্রি করছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা বিভিন্ন ছোট ছোট মিল থেকে ময়দা বাজারে আসছে।