মাসুদ হাসান বাদল: সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে অনুকরণীয় সাফল্য পেয়েছেন আবুল কাশেম। গড়ে তুলেছেন পরিকল্পিত আদর্শ বাড়ি। তার বাড়ি এখন গাছে ভরা। পুকুরে ভরা মাছ।
শেরপুরের কসবা কাচারিপাড়ার বাসিন্দা আবুল কাশেম। জেলার শ্রীবরদী উপজেলা কার্যালয়ে এমএলএসএসের চাকরি করেন। মাত্র ৩৩ শতক জমির ওপর তার বাড়ি। এ বাড়িতে ১০ প্রজাতির আম, চার প্রজাতির লিচু, দুই প্রজাতির জামরুলসহ ৯টি পেঁপে গাছ, একাধিক পেয়ারা, জলপাই, কাঁঠাল, জাম, সুপারি, আপেল কুল, আমড়া, চালতা, লেবু, কলা, জাম্বুরা, দেশি আতা ফল, সবেদা, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর গাছ লাগিয়েছিলেন। এসব গাছের প্রায় সবগুলোতেই মৌসুম অনুযায়ী ফল ধরেছে। একটু ফাঁকফোকর বের করে এসব গাছের নিচে শিম, লাউ, রসুন, পেঁয়াজ, হলুদ, গাজর, আদা, পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতার চাষ করেছেন।
ইতোমধ্যে লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা ও ধনিয়া পাতা বিক্রির জন্য শহরের অভিজাত নানা রেস্তোরাঁর সঙ্গে চুক্তি করেছেন। তার আয়ের সিংহভাগ আসে গাছের চারা কিংবা কলম বিক্রি করে। তিনি প্রতিটি বড় গাছের নিচে কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করেন। এরপর একই স্থানে ওই চারা গাছের নিচে পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতাসহ সবজির বীজ ফেলে রাখেন। এগুলো একটু বড় হলে অন্যত্র স্থানান্তরিত করেন।
তার বাড়িতে প্রায় দুই শতক জমির ওপর ছোট্ট দুটি পুকুর রয়েছে। এখানে রুই ও কাতলা মাছ চাষ করছেন। পুকুর দুটির মাঝখানে পানির মধ্যে বিশেষ কায়দায় আমগাছ রোপণ করেছেন। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, পুকুরের মধ্যে আম গাছ দাঁড়িয়ে আছে। এ পদ্ধতিতে আমের ফলনে বা পুকুরের মাছ চাষে কোনো সমস্যা হয় না বলে জানান আবুল কাশেম।
এলাকার অনেকে সামান্য জমির সুষ্ঠু ব্যবহারের কৌশল জানতে কাশেমের শরণাপন্নœ হন। ফসল বিক্রির টাকা ও বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিন তলা ফাউন্ডেশনের একটি ভবন নির্মাণের চেষ্টা করছেন। ভবন তৈরির পেছনেও আছে রহস্য। ভবনের ছাদে বাগান করতে চান। সেখানে টবের মধ্যে চারাগাছ রোপণ করে ছাদ বাগান করার ইচ্ছা আছে তার।
চাষাবাদের পাশাপাশি নিয়মিত অফিস করেন। সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য ছুটির দিনে বাগানেই সময় কাটান। এখন পর্যন্ত কোনো শ্রমিক নিয়োগ দেননি। পুকুরের মাটি কাটা থেকে গাছগাছালির যতœ নেওয়াÑ সবই নিজ হাতে করেছেন। একান্ত প্রয়োজনে বাগানের পরিচর্যা করেন তার স্ত্রী।
স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। নিজে খুব বেশি লেখাপড়া করতে না পারলেও
ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার ইচ্ছা আছে তার। তার বাবা আবদুল হাকিমও একজন কৃষক ছিলেন।
চাষাবাদের প্রয়োজনে কখনও কোনো কীটনাশক ও কৃত্রিম সার ব্যবহার করেননি আবুল কাশেম। গোবর ও কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেন। একটি গরুর খামার করার ইচ্ছা আছে তার।
শেরপুর
Add Comment