বাড়ি ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা

প্রতিনিধি, কক্সবাজার : বাংলাদেশে থাকতে চায় না উখিয়া এবং টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। নিজ দেশে ফিরে গিয়ে সম্মান ও মর্যাদার সাথে জীবন যাপন করতে চান কক্সবাজারে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। নিজ মাতৃভূমি মায়ানমারে ফেরার আকুতি জানিয়ে রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে দেশ ছাড়া হওয়ার ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন রোহিঙ্গারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে উখিয়া এবং টেকনাফের ৩০ টি ক্যাম্পে পৃথকভাবে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠন। এসময় তারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি জানান।

এসময় রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়নের এখনও বিচার পায়নি তারা। আন্তর্জাতিক আদালতে গনহত্যার বিচারের দাবিসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান রোহিঙ্গারা। নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিতেও সোচ্ছার ছিলেন সমাবেশে অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার কামাল হোসেন জানান, ৫ বছর হয়ে গেলেও তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায়নি মিয়ানমার। শিগগির তারা নিজ দেশে ফিরতে চায়। সে জন্য মিয়ানমারে প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ প্রয়োগ করতে হবে বলেও মত দিয়েছেন তিনি।

এদিকে রোহিঙ্গা আগমনের ৫ বছর পূর্তিতে দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন ‘রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি কক্সবাজার’ নামে স্থানীয়দের একটি সংগঠন।

কমিটির সভাপতি সাংবাদিক মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক মোঃ নেজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে স্থানীয়রা বলেন, দেশে রোহিঙ্গারা এসেছে ৫ বছর পূর্ণ হলেও প্রত্যাবাসনের কোন প্রক্রিয়া দৃশ্যমান নয়। ফলে মাদকের আগ্রাসন, চুরি ডাকাতিসহ সমাজে অপরাধ বেড়েছে। ৫ বছরে ক্যাম্পে ৯৯ টি খুন ও ২ হাজার মামলা হয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয়দের গুম করে চাঁদা দাবি করছে। আজকে রোহিঙ্গা থাকার কারণে স্থানীয় নাগরিকদের রোহিঙ্গা নয় মর্মে প্রত্যয়নপত্র নিতে হয়। যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আশা করি, কক্সবাজারকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে সরকার নজর দিবে।

ক্যাম্পে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএন’র -উপ অধিনায়ক কামরান হোসেন বলেন, ‘আমার অধীন ১৬, ১৩ নম্বর ক্যাম্পসহ ১১টি ক্যাম্পে ২০টি পৃথক স্থানে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে এবং মানববন্ধনে নিরাপত্তা জোরদার ছিল।’

এবিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদৌজা শেয়ার বিজকে জানান, প্রায় ৮ লক্ষ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাদের তালিকা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে। উচ্চ পর্যায়ে এ নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের আগস্টে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে নতুন করে পালিয়ে আসে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা, সরকারি হিসেবে যাদের সংখ্যা এখন প্রায় ১১ লাখেরও বেশি। পরে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদেরকে উখিয়ার টেকনাফের ৩৪ টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়।

এর আগে, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ক্যাম্পে প্রথম বড় সমাবেশ করা হয়, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাস্টার মুহিবুল্লাহ। পরে তিনি সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। এবারের সমাবেশে কেউ নেতৃত্বে ছিলেন না। কমিউনিটি নেতারাই রোহিঙ্গাদের জড়ো করান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০