Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 9:56 pm

বাড়ুক প্রতিযোগিতাক্ষম তরুণদের অংশগ্রহণ

গতকাল রোববার থেকে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা। শেয়ার বিজ পাঠকরা নিঃসন্দেহে সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। খেয়াল করার মতো বিষয়, একটা সময় পর্যন্ত দেশে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে যেতো মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই। তবে বিগত কয়েক দশকে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার অব্যাহত প্রচেষ্টায় সে পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নারী ও পুরুষ সব ধরনের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বেশি; পরীক্ষার ফলও নেয়াত মন্দ নয়। এক্ষেত্রে অত্যন্ত চালু একটি সমালোচনা হলোÑসরকার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ‘নানাবিধ’ উপায়ে পাবলিক পরীক্ষার ফল ভালো দেখাচ্ছে, যার প্রতিফলন বছর বছর লাখ লাখ সর্বোচ্চ জিপিএ প্রাপ্তি। এখানে পরিমাণগত শিক্ষার দুর্বলতার প্রতি যে ইঙ্গিত রয়েছে, তা আমলে নেওয়া আবশ্যক। এর বদলে ঢালাওভাবে সমালোচনা অগ্রহণযোগ্য। কেননা প্রথমত, সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এখন বিশ্বে স্বীকৃত। শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব এর ওপর না থেকে পারে না। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ইদানীং বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততা অতীতের তুলনায় বেড়েছে বলেই প্রতীয়মান। এটিও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির দৃশ্যমান লক্ষণ বটে। কথা হলো, দেশে গুণগত শিক্ষা কার্যকরে যতটা উচ্চরব শোনা যায় পরিবর্তনশীল শ্রমবাজারের সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার অধিকতর সমন্বয়ের দাবি তেমন ওঠে না বললেই চলে। অথচ ইস্যুটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অবশ্য মানসম্পন্ন শিক্ষা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম দাবি। আবার সর্বজনীন শিক্ষাও বর্তমানে মানবাধিকারের পর্যায়ভুক্ত। আর আমাদের দেশের চলতি শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা যদি করতেই হয়, তাহলে তা উভয় দিক সতর্কভাবে মূলায়নের পরই করা বাঞ্ছনীয়। সেক্ষেত্রে কারও কারও মতে, কার্যত মানসম্পন্ন শিক্ষার মধ্যে কিছু সাংঘর্ষিক উপাদান বিদ্যমান; যেগুলোর মীমাংসা অনেকাংশে নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। আবার যে কোনো শিক্ষারই দুটো দিক রয়েছে এক. মানসিকতা ও মূল্যবোধ সংক্রান্ত এবং দুই. কর্মমুখী। আর শেষোক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা কেবল আলোকিত মানুষ গড়ারই পথ নয়; এটি উপযুক্ত কর্মজীবনেরও পাথেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা এখনও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বলে অনেকের ধারণা। নীতিনির্ধারকদের উচিত, কেবল গ্রেড পয়েন্ট বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ না রেখে এবং ঢালাও সমালোচনা উপেক্ষা করে বিষয়টি যথাযথভাবে আমলে নেওয়া। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। আমাদের বাণিজ্যিক তথা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভর করে বিশ্বায়িত ব্যবস্থার ওপর। সুতরাং শিক্ষার মান তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত। আবার বিশ্বায়নকে খানিকটা দূরে সরিয়ে কেবল শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের চিন্তা করলেও তা প্রতিযোগিতাক্ষম স্থানীয় শ্রমবাজার ছাড়া অকল্পনীয়। আরেকটি বিষয়, এ মুহূর্তে তো পাচ্ছেই আগামী আরও কয়েক দশক বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এর মধ্যে স্থানীয় শ্রমবাজারের মানদণ্ড উন্নয়ন সম্ভব না হলে আমরা বিশ্ববাজারে অনেকটাই পিছিয়ে থাকবো; যা কারও কাম্য নয়। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট আমলে নিয়েই শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি। সেজন্য প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সব পর্যায়ে মানোন্নয়নে জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-প্রদত্ত সেবার মান বৃদ্ধিতেও নজর দেওয়া দরকার। কেননা দুর্বল শিক্ষক, দুর্বল শিক্ষার্থী, দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা ও দুর্বল মানবসম্পদ এটি একটি শক্তিশালী দুষ্টচক্র। কারও কারও মতে, এক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক তথা শিক্ষার মানোন্নয়নে অধিক গুরুত্বারোপ দরকার, যেহেতু বিপুলসংখ্যক অর্ধদক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয় এখান থেকেই।