Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 2:48 am

বায়িং হাউজ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না যত্রতত্র

মাসুম বিল্লাহ: দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক। এ রফতানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বায়িং হাউজ। কিন্তু বায়িং হাউজ কোনো নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত নয়, ফলে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে এ খাতকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি নীতমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। এরই মধ্যে নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খসড়া নীতিমালার ওপর মতামত চেয়ে বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

খসড়া থেকে জানা যায়, বর্তমানে যেসব বায়িং হাউজ বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনে (বিজিবিএ) নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা করছে, নীতিমালা হলে সেসব প্রতিষ্ঠানকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোতে (ইপিবি) নতুন করে নিবন্ধন নিতে হবে। ইপিবি প্রতিবছর ডিসেম্বরে বায়িং হাউজের কাগজপত্র পরীক্ষা করে ওইসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ইপিবির বস্ত্র সেল থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করা হবে। আর কাগজপত্রের বিষয়ে কোনো আপত্তি বা পর্যবেক্ষণ থাকলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কেবল ইপিবিতে নিবন্ধিত বায়িং হাউজই তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বিদেশের ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এলসি হস্তান্তর করতে পারবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে এ মর্মে একটি আদেশ জারি করবে। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভর্তি ফি হবে এককালীন ৫০ হাজার টাকা। আর বার্ষিক চাঁদা পাঁচ হাজার টাকা।

নীতিমালা তৈরির কারণ হিসেবে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, রফতানির সামগ্রিক সমস্যা নিরসন করে নি¤œমধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আর তৈরি পোশাক রফতানিতে বায়িং হাউজের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু বায়িং হাউজ কোনো নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত নয়, ফলে তাদের কার্যক্রম তদারকি করা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত হচ্ছে না। আর তৈরি পোশাকের রফতানিতে অর্থ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বায়িং হাউজের অবস্থান স্পষ্ট নয়। একই সঙ্গে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে সৃষ্ট বাণিজ্য বিরোধেরও সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকার বায়িং হাউজের কার্যক্রমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিজিবিএ সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটি একটি ইতিবাচক বিষয়। বাংলাদেশে বায়িং হাউজের ব্যবসা বিশৃঙ্খলভাবে চলছে। সাত-আট বছর ধরে আমরা এটাকে একটা নীতিমালার অধীনে আনার জন্য দাবি করে আসছি। এখন একটি অগ্রগতি হয়েছে। নীতিমালাটি খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। স্টেকহোল্ডার হিসেবে এ নীতিমালা করার কাজে আমি নিজেও সম্পৃক্ত ছিলাম। এ নীতিমালাটি চূড়ান্ত হওয়ার পর দ্রুত চালু হওয়া দরকার। এতে মাশরুমের মতো যত্রতত্র কেউ বায়িং হাউজ খুলে বসতে পারবে না। ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা ও মূল্যের মধ্যে ন্যায্যতা সৃষ্টি হবে।’

খসড়া নীতিমালায় বায়িং হাউজের কর্মপরিধিও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বায়িং হাউজ ও কোনো তৈরি পোশাক কারখানা পরস্পর সুনির্দিষ্ট চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করবে। উভয়পক্ষ তাদের চুক্তিপত্রের অনুলিপি নিজ নিজ সংগঠনে পাঠাবে। আর বিজিবিএ’র মাধ্যমে একটি কপি ইপিবিতে পাঠাতে হবে। বায়িং হাউজগুলো বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নমুনা সংগ্রহ করে নিজে অথবা রফতানিকারকের মাধ্যমে নমুনাটি প্রস্তুত করে ক্রেতার কাছে পাঠাবে। আর বায়িং হাউজগুলো ক্রেতার চাহিদা ও মান অনুযায়ী কারখানা বাছাই করবে।

কর্মপরিধির মধ্যে আরও আছে, ক্রেতা ও রফতানিকারক কারখানার সঙ্গে মূল্য নির্ধারণে বায়িং হাউজগুলো স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসরণ করবে। বায়িং হাউজ কর্তৃপক্ষ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এলসি হস্তান্তরের পর রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের অর্থপ্রাপ্তি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।