Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:28 pm

বায়ু দূষণ রোধে চাই কার্যকর ব্যবস্থা

বায়ু দূষণ সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। ‘অ্যামবিয়েন্ট এয়ার পলিউশন: এ গ্লোবাল অ্যাসেসমেন্ট অব এক্সপোজার বারডেন অব ডিজিজ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যু ছাড়াও বায়ু দূষণজনিত বিভিন্ন রোগে আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর। স্থায়ীভাবে কর্মক্ষমতাও হারাচ্ছেন অনেকে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বায়ু দূষণের প্রভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার মানুষ। বস্তুত বায়ু এমন এক উপাদান, যা ছাড়া জীবন অকল্পনীয়। অক্সিজেন গ্রহণ করে যেসব জীব বেঁচে থাকে, এর দূষণে সেসব জীবের জীবনও হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, অর্থনীতির আকার বেড়ে ওঠার সঙ্গে দেশে শিল্পায়ন যেভাবে হচ্ছে, কলকারখানা যে হারে বেড়ে উঠছে, পরিবেশ সচেতনতা কি বাড়ছে তার সমান্তরালে? এটা করা না হলে আমাদের জীবন যে আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থনীতির যে ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য এসব করা হচ্ছে, তাও হবে ক্ষতিগ্রস্ত। কেননা শিল্পকারখানায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব কতটুকু, তা আমরা জানি। বায়ু দূষণে এদের একটি অংশ যে রুগ্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং তারা কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন স্থায়ীভাবে, সেটিও বিবেচনায় রাখা দরকার। আর মানুষ রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসা বাবদ তার ব্যয় বেড়ে ওঠে। সমাজে রোগাক্রান্ত ও কর্মক্ষমতাহীন মানুষ বৃদ্ধি পেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে জাতীয় অর্থনীতিতে। এজন্য আমরা চাইবো, মানবস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি উভয় দিক বিবেচনায় নিয়েই বায়ু দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে সরকার।

সন্দেহ নেই, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের প্রভাব ঢাকাসহ শিল্পসমৃদ্ধ কয়েকটি জেলায় বেশি। এদেশে পরিচালিত নানা গবেষণায়ও তা উঠে এসেছে অনেক আগে। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, গাড়ির কালো ধোঁয়া, দূষণ রোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারহীনতা ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। সরকার চাইলে উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোয় অগ্রগতি অর্জন কিন্তু কঠিন নয়। গ্রামাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটা স্থাপনে বায়ু দূষণ হচ্ছে সেখানেও। ভাটা স্থাপনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম অবশ্য রয়েছে। কতটা যাচাই-বাছাই করে এ ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ শোনা যায়। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে সেখানেও ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বায়ু দূষণের যে চিত্র তুলে ধরেছে, সেটাকে আমাদের সতর্কবার্তা হিসেবেই নেওয়া উচিত। মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন এবং এ লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি যে আরও খারাপ হবে, তা কে না জানে। অক্সিজেনহীন একটি মুহূর্ত কি আমরা কল্পনা করতে পারি? কিন্তু এটি যদি দূষিত হয়ে পড়ে এবং এতে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানবস্বাস্থ্য; কষ্টকর হয়ে ওঠে শ্বাস নেওয়া। এজন্য স্বাভাবিক জীবন ও সুস্বাস্থ্যের বিষয় বিবেচনায় রেখেই উল্লিখিত বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অর্থনীতির জন্য শিল্পকারখানা, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে ইট প্রস্তুত করতে হবে ঠিকই; কিন্তু এসব করতে গিয়ে একেবারে অবিবেচক হলে চলবে না। মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের চেয়ে আর কোনো কিছু বেশি মূল্যবান নয়। একে অগ্রাহ্য করার অর্থ হলো, নিজেদের ক্ষতিকে অনিবার্য করে তোলা। বায়ু দূষণের বিষয়ে দেশীয় গবেষকদের সতর্কতা সত্ত্বেও সরকারের মধ্যে যে নির্লিপ্ততা আমরা দেখেছি সংশ্লিষ্টরা এবার তা থেকে বেরিয়ে আসবেন বলে আশা করি। এক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনে যা কিছু দরকার, তার জন্য সরকার প্রয়োজনে বিশ্ব সংস্থাটির সহায়তাও নিতে পারে।