নিজস্ব প্রতিবেদক : বিভিন্ন ব্যাংকে মন্দ ঋণ বেড়েই চলেছে। এজন্য ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যে সবেচেয়ে খারাপ অবস্থা রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর। এদের মূলধন দিন দিন কমছে। এসব ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি রয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যার ফলে বাড়ছে মূলধনের ঘাটতি। এ ঘাটতি মোকাবিলা ব্যাংকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাই ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে মন্দ ঋণ কমানো দরকার বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটরিয়ামে ‘ট্রেজারি অপারেশনস অব ব্যাংকস ২০১৬’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানান। বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএম’র পরিচালক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন, দি সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দীনসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৬ সালে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য হিসাবের দ্বিগুণ। ২০১৩ সালে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল আট দশমিক ৯৩ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে এ খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল আট দশমিক ৭৯ শতাংশ। পুনঃতফসিল নীতিমালায় ছাড় দেওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। এছাড়া আরও কিছু কারণে ব্যাংকিং খাতের জন্য খেলাপি ঋণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার বেশি ছিল ২০১২ সালে। সে বছর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল ১০ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতকে দুর্বল করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। খেলাপি ঋণের কারণে কিছু ব্যাংক লাভের মুখ দেখছে না বছরের পর বছর। ফলে, সুদের হার এখনও নাগালের বাইরে। একই সঙ্গে ভালো ঋণ গ্রহীতারা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বোচ্চ তদারকি করতে হবে।
বিআইবিএম’র মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরীর বলেন, খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতে সর্বনাশ ডেকে আনছে। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে পুরো ব্যাংকিং খাতের জন্য চরম খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এ ধরনের ঋণের কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাংকগুলো ভালো গ্রাহকদের কাছ থেকে চড়া সুদ নিচ্ছে।
এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্ট ও সিইওদের আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। তা না হলে, ব্যাংকিং খাতে ক্ষতির আশঙ্কা আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, সরকার ব্যাংকিং খাত নিয়ে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলায়, যা খুব বিব্রতকর। এ অবস্থার উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। সরকারের উচিত বছরের প্রথমেই একটি বার্ষিক পরিকল্পনা প্রকাশ করে সে পরিকল্পনা অনুসারে সারা বছরের কার্যক্রম পরিচালনা করা, তাহলেই ব্যাংকের জন্য সুফল আসবে।
এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) বিষয়টাকে বরাবরই উপেক্ষা করা হয়েছে। ওবিইউ ফান্ডের ব্যাপারে একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। ব্যাংকগুলার গতিশীলতা ঠিক রাখতে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মেহেদি জামান, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান আরিকুল আরিফিন প্রমুখ।