নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৬ সালের জুনে নন-পারফরমিং লোন (এনপিএল) বা খেলাপি ঋণের অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক এক শতাংশ। আগের বছরের একই সময় এ হার ছিল আট দশমিক আট শতাংশ। এনপিএল ব্যাংকিং খাতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘ঋণ কার্যক্রম ২০১৬ সালের পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএম পরিচালক এবং অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বড় ঋণের পরিমাণ বাড়ছে; কিন্তু ছোট ও মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠানে ঋণের পরিমাণ কমছে। এক্ষেত্রে শহরে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে ঋণপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।
বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলী, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন।
আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, বিআইবিএমের গবেষণায় ২০১৬ সালের ঋণ ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত তারল্য এবং খেলাপি ঋণের সমস্যা উঠে এসেছে। এ দুটি বিষয় এখন ব্যাংকিং খাতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে গত এক বছরেই বেশ কিছু প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর একটি অংশ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু ব্যাংকগুলো কিছু ছোট ও মাঝারি ঋণগ্রহীতার দিকে কম নজর দিচ্ছে। অধিক তারল্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে আত্মঘাতী। তিনি বলেন, ব্যাংকঋণ ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে হলে তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকেই অর্থ ব্যয় করতে হবে।
হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবির মতো করে সহজ আমানত ডেটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব রেজিস্ট্রি অফিস ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। সুতরাং এ কাজটি করা খুব সহজ হবে। তিনি বলেন, আইনি ব্যবস্থায় খেলাপির অর্থ আদায় সময়সাপেক্ষ। এজন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সাহায্য নিয়ে খেলাপি অর্থ আদায় করা সম্ভব হতে পারে।
মো. ইয়াছিন আলী বলেন, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার এক শতাংশের কম। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এ হার ৪০ শতাংশের ওপরে। একই পরিবেশে কাজ করে এত কম-বেশি হবে কেন। এখানে কোনো সমস্যা আছে। তিনি বলেন, সরকার ব্যাংকঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যর্থ হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারছে না। ফলে শিল্প-কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ব্যাংক খাতের অনেকেই এখন গ্রেফতার। বেনামি চিঠি ও গণমাধ্যমের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার না করে কোনো অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করা হয়েছে।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, দুদকের গ্রেফতারের কারণে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটি এ খাতের জন্য শুভ নয়।
Add Comment