সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলে এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৬৫ হাজার। ১০ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৭ গ্রাহক থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২০ জন। বিপরীতে অর্থবছর শেষে বিল আদায়ের রেশিও সন্তোষজনক হলেও বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
বিউবো বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ তিন মাস ও চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস আদায়ের পরিমাণ কমে যায়। একইসঙ্গে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিউবো আদালত পাঁচ মাস বন্ধ থাকে। তাতে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত না হওয়ায় নতুন মামলা ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। এতে বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে অর্থবছর শেষে বিদ্যুৎ বিল আদায়ের রেশিও বেশ ভালো ছিল।
বিউবো বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট বিদ্যুৎ বিলকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিপরীতে অর্থবছর শেষে আদায় হয় দুই হাজার ৭১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তাতে আদায়ের রেশিও দাঁড়ায় ৯৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এদিকে বিদায়ী অর্থবছরের শুরুতে ৩৩৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা বকেয়া থাকলেও অর্থবছর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
একইসঙ্গে বকেয়ার সমমাসের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক দশমিক ৪২ মাস থাকলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বকেয়ার সমমাস হয় এক দশমিক ৭৭ মাস। তবে সিস্টেম লস কিছুটা কমেছে; আট দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ থেকে কমে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে সিস্টেম লসের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত দশমিক ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ সিস্টেম লস হ্রাস পেয়েছে দশমিক ৭১ শতাংশ।
এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিউবো আদালত (উত্তর ও দক্ষিণ) জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এবং সংযোগসহ মামলা হয় ৩৮০টি। এসব মামলার বিপরীতে জরিমানা করা হয় এক কোটি ৪৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। একইসঙ্গে ওই সময়কালে বিউবো আদালতের মাধ্যমে বকেয়া আদায় করা হয় তিন কোটি ৭৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত আর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত না হওয়ার নতুন কোনো মামলা হয়নি।
অবশ্য বিউবো আদালত উত্তর ও দক্ষিণের মাধ্যমে আগস্ট মাসে বকেয়া আদায় করা হয় ১৩ লাখ ৫৩ টাকা। আর নতুন জরিমানা করা হয় এক লাখ টাকা। বর্তমানে সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউন তুলে দেওয়ার পর থেকে আগের মতো কাজ শুরু হয়েছে বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের সব জোনে। তাতে বকেয়া ও বিল আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে।
এ বিষয়ে বিউবো বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামছুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির আগ পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদায়ের রেশিও ছিল ১০১ দশমিক ৫১ শতাংশ। কিন্তু করোনার কারণে অর্থবছর শেষে সে হার ধরে রাখা যায়নি। করোনা পরিস্থিতি না হলে আরও ৫০ কোটি টাকা বেশি আদায় হতো। তবে গত মাসে আমরা কিছুটা রিকভার করেছি এবং আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাকিটুকু রিকভার হয়ে যাবে। একই সঙ্গে আমাদের সিস্টেম লসের পরিমাণও কমেছে, যা খুবই ইতিবাচক।’